মোঃ মাইন উদ্দিন : মানুষের সবচেয়ে কাছে যে প্রাণীটি বন্ধু হিসেবে থাকে, সেটা কুকুর। নিজের চোখ কান বন্ধ থাকলেও জেগে থাকা কুকুরের কান খাড়া থাকে, চোখ খোলা থাকে। এমনকি যেকোনো বিপদে জীবন বিপন্ন করে ঝাঁপিয়ে পড়ার মানসিকতা কেবল দেখা যায় কুকুরের মধ্যেই। অন্য প্রাণী যেমন পালিয়ে যায় নিরাপদ দূরত্বে অথবা আক্রমণ করে বসে, কুকুর কিন্তু সেক্ষেত্রে সম্পুর্ণ আলাদা। কুকুর মানুষকে নিরাপত্তা দিতেও ভূমিকা রাখে। যা শুধু আমি নয় সবারই জানা।
অনেক দিন আগের কথা। সেই ছেলেবেলা আমার বাবা-মা আমাকে একটি গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে। কুকুরের প্রভুভক্তির গল্প। বাবা-মার মুখে শুনেছিলাম- "এক লোক জাহাজ থেকে নদীতে পড়ে গিয়েছিল। প্রবল স্রোতের মাঝে কেউ-ই সাহস করে তাকে উদ্ধার করতে যায়নি। এমন সময় পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার পোষা কুকুর। প্রবল স্রোতের প্রতিকূলে প্রাণপণ সাঁতরে কূলে নিয়ে আসল তার মনিব বন্ধুকে। কিন্তু প্রানান্তকর ক্লান্তিতে অবসন্ন কুকুরটি শেষ পর্যন্ত নিজেই প্রাণত্যাগ করলেন।"
আমার বাবা-মা যে খুব ভাল গল্প কথক ছিলেন তা নয়। তবে চঞ্চল প্রকৃতির সন্তান আমাকে ঘুম পাড়ানোর সুতীব্র প্রয়োজনে এর চেয়ে কার্যকরী আর কোন মহৌষধ হয়তো তাদের জানা ছিলনা। বাবা-মার ভান্ডারে যেহেতু খুব বেশি গল্প সঞ্চিত ছিলনা, সেহেতু একই গল্প ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শোনাতো আমাকে। আমিও গল্পটা অনেকবার শুনেছি। আর সেই গল্প শুনে শৈশব থেকেই নিজের অজান্তে প্রাণীটির প্রতি এক ধরণের মমত্ববোধ জন্মে যায় আমার। কুকুর দেখলে আমি মুগ্ধ হয়, চেয়ে থাকি কাঙ্খিত নয়নে। কবে বড় হবো, কুকুর পুষবো।
হাটিহাটি পা পা করে আমি বড় হই, কুকুর পুষি। কুকুরটিও বাবা-মায়ের মুখে শোনা সেই গল্পের মতই আমার বন্ধু হয়ে উঠে, সৃষ্টি করে বন্ধুত্বের ইতিহাস। তবে সবচেয়ে গর্ভের বিষয়, সে কখনও মিথ্যে অভিনয় করেনি। বাবা-মা আমার প্রতি ক্ষেপে গিয়ে আমাকে চড়-চাপড় মারতে গেলে সে মধ্যে এসে বাধা হয়ে দাড়াতো। আমি কোথাও গেলে সে আমার সঙ্গী হতো। গোসল করতে গেলে আমার আগে আগে সেও ঘাটে যেতো। খেলাধুলা করতে গেলে সেও মাঠে গিয়ে আমার কাছাকাছি থাকতো। আমি যেখানে বসতাম সেও সেখানেই বসতো।
আরো অবাক বিষয় হলো- আমি কোথাও থেকে আসলে সে কাছে এসেই বুঝতে পারতো আমার মনোভাব। চোখের দিকে তাকিয়ে আমার আবেগ বুঝতে পারতো। আমি তখন পর্যবেক্ষণ করে দেখতাম, সে যখন আমার দিকে তাকাতো খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চোখের দিকে তাকিয়ে মনোভাব বোঝার চেষ্টা করতো। মানে সব মিলিয়ে কুকুরটি সত্যিই আমার ভালো বন্ধু ছিল। যেই বন্ধুকে নিয়ে সারাদিন লিখলেও শেষ হবে না। কারণ আমার জীবনে সে-ই ছিল একমাত্র বন্ধু। নিঃস্বার্থ বন্ধু।
যোগাযোগ :
বাসা নং-১৯, ৫ম তলা, রোড-৭/এ,
ব্লক-বি, বারিধারা, গুলশান, ঢাকা-১২১২
সম্পাদক ও প্রকাশক : নাজমা সুলতানা নীলা
মোবাইল: ০১৬২২৩৯৩৯৩৯
ইমেইল: nazmaneela@gmail.com