আজিজুল ইসলাম বারী, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ ব্রিটিশ আমলের প্রযুক্তি সড়িয়ে দেশের প্রথম টার্ন টেবিল নির্মান করল লালমনিরহাট রেলবিভাগ, ইঞ্জিন বা কোচ ঘোরানোর জন্য আর ঢাকায় যেতে হবে না। লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনের সিক লাইন এলাকায় প্রস্তুত এ টার্ন টেবিলটি উদ্বোধন হলে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে।
রেলের ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর জন্য লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের ব্রিটিশ আমলের নির্মিত টার্ন টেবিলটি পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ায় উল্টোদিকেই গাড়ী চালাতে হয় চালকদের। এতে করে একদিকে চলার কারণে চাকার ক্ষয় হচ্ছে। আর চালকও পিছনে বসে ট্রেন চালাতে হয়, এ কারনে অনেক সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রায় তিন দশক আগে লালমনিরহাটের টার্ন টেবিলটি বিকল হওয়ার পর পশ্চিমাঞ্চলের রেলের ইঞ্জিন ও কোচগুলো কয়েক মাস পরপর ঢাকা থেকে ঘুরিয়ে আনা হয়। লালমনিরহাটের টার্ন টেবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার দীর্ঘ ৩০বছর পর লালমনিরহাট রেলওয়ে যন্ত্র প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে টার্ন টেবিলটি নির্মান করা হয়েছে। লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনের আধা কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে সিক লাইন এলাকায় ৯ শতক জমির ওপর টার্ন টেবিলটির অবস্থান। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, লালমনিরহাটে প্রথমবারের মতো, দেশে টার্ন টেবিল নির্মাণ করা হয়েছে। টার্ন টেবিলে ১৪ টন ওজনের একটি ব্রিজ রয়েছে। এটি এই যন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর ওপরে ইঞ্জিন ও কোচ তুলে ঘোরানো হয়। স্থাপনাটির তিন ধাপে পাকা দেয়ালের সীমানাপ্রাচীর যা সুরক্ষাপ্রাচীর ও লাইন দেয়াল নামে পরিচিত। এর মেঝে আরসিসি ঢালাই দেয়া, পানি জমলে, রয়েছে পাম্প দিয়ে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ।
রেলওয়ে সূ্ত্রে জানা যায়,ব্রিটিশ আমল ১৮৬২ সালে লালমনিরহাটে নির্মিত হয় টার্ণটেবিল। যা দীর্ঘ সময় সচল ছিল, রেলের ইঞ্জিন ও কোচ ঘুরানোর জন্য লালমনিরহাটের টার্ন টেবিলটি ১৯৯৩ সালে বিকল হয়ে যায়। বৃটিশরা এটির নকশা ও নির্মান কৌশল সরিয়ে ফেলায় বাংলাদেশে আর কোন টার্ণ টেবিল নির্মিত হয়নি।দীর্ঘ ৩০বছর পর লালমনিরহাট রেলওয়ে যন্ত্র প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে টার্ন টেবিলটি নির্মান হয়েছে। টার্ন টেবিল না থাকায় ইঞ্জিন ঘুরাতে না পেরে উল্টোভাবে চালকে পিছনে বসে চালাতে হয়, চালক ইঞ্জিনের পিছনের দিকে বসায় আঁকাবাকা রেললাইনে চালকদের দেখতে অসুবিধা হয়, এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়াও একদিকে চলাচলের কারণে ঘর্ষনে ক্ষয় হচ্ছে চাকাগুলো। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। তাই এ সমস্যা সমাধানে দেশের এই প্রথম লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ নিজ প্রযুক্তিতে স্বল্প খরচে রেলের অব্যবহৃত যন্ত্রাংশ দিয়ে নির্মান করেছে টার্ন টেবিল। এখন শুধু রেললাইন সংযোগের অপেক্ষা। এটি চালু হলে দেশের মধ্যে হবে এই প্রথম নির্মিত টার্ন টেবিল।
বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তরের প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবু জানান, দীর্ঘদিন ধরে লালমনিরহাটে টার্ন টেবিল না থাকায় মিটারগেজে চলমান ইঞ্জিন ও কোচ কয়েক মাস পরপর ঢাকার কমলাপুরের টার্ন টেবিলের মাধ্যমে ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হতো। এটি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপকের (পশ্চিম) কার্যালয় থেকে লালমনিরহাটে টার্ণ টেবিল নির্মানের প্রশাসনিক অনুমোদনের চিঠি দেওয়া হয়। যার নির্মাণকাজ চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে, শেষ হয়েছে গত মার্চ মাসে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৫ লাখ টাকা।
টার্ন টেবিল কেন দরকার এমন প্রশ্নে তিনি জানান, একটি কোচ বা ইঞ্জিনকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর টার্ন টেবিলের ওপর রেখে ঘোরানো হয়। এতে বাঁ দিকের চাকা ডান দিকে, ডান দিকের চাকা বাঁ দিকে চলে যায়। ফলে দুই পাশের চাকা সমানভাবে ক্ষয় হয়। এতে চাকার স্থায়িত্ব বাড়ে। চালক যদি ইঞ্জিনের পেছনে বসেন, তাহলে রেললাইনের সংকেত (সিগন্যাল) দেখতে অসুবিধা হয়। এতে ট্রেনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।
তিনি আরো জানান, দেশে এই প্রথম দেশীয় যন্ত্রাংশ দিয়ে টার্ন টেবিলটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ইঞ্জিন ও কোচ সহজেই ঘোরানো যাবে। স্বল্প ব্যায়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ টার্ণ টেবিলটি নির্মান করেছি। এতে যেমন চাকার ক্ষয়রোধ হবে তেমন চালককে আর পেছনে বসে ট্রেন চালাতে হবেনা। নতুন টার্ন টেবিলের কার্যকারিতা সফলভাবে যাচাই করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম টার্ন টেবিল। চলতি মে মাসের শেষ দিকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধন করার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা লালমনিরহাটে আসার কথা রয়েছে।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবদুস সালাম বলেন, সম্পূর্ণ দেশি প্রযুক্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে স্বল্প টাকা ব্যয়ে টার্ন টেবিলটি নির্মিত হয়েছে। এতে অব্যবহৃত লাইন, চাকাসহ অন্য লৌহজাত নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। রেলের কর্মকর্তারা সব সময় নিজেদের মেধা দিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। এটি তার একটি উদাহরণ।
যোগাযোগ :
বাসা নং-১৯, ৫ম তলা, রোড-৭/এ,
ব্লক-বি, বারিধারা, গুলশান, ঢাকা-১২১২
সম্পাদক ও প্রকাশক : নাজমা সুলতানা নীলা
মোবাইল: ০১৬২২৩৯৩৯৩৯
ইমেইল: nazmaneela@gmail.com