আজিজুল ইসলাম বারী,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে চলছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। মাসে শুধু এক বার গিয়ে উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন ভাতা তুলছেন শিক্ষকরা। নিয়মিত বিদ্যালয় আসলেও তেমন কিছু শিখতে পারছেন না ক্ষুদে কোমলমাতি শিক্ষার্থীরা। এতে করে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে নিয়মিত না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিবাবকরা।
প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান পরিচালনা করা বিদ্যালয়টি হলে, সিন্দুর্না সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জানাগেছে, উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের তিস্তা নদীর কোল ঘেষে অবস্থিত সিন্দুর্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। চর অঞ্চলে বিদ্যালয়টি হওয়ায় তেমন কোন নজর নেই উর্ধতন শিক্ষা কর্মকর্তাদের। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান পরিচালনা করছেন প্রধান শিক্ষক সেলিম উদ্দিন। মাসে শুধু এক বার গিয়ে উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন ভাতা তুলছেন শিক্ষকরা।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানাগেছে, সিন্দুর্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মোট ১০৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। আর শিক্ষক রয়েছেন মোট ৩জন। আর শিক্ষকরা হলেন, প্রধান শিক্ষক সেলিম উদ্দিন, সহকারী শিক্ষক মহা রানী রায় ও কামরুল ইসলাম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষক নেই। শিক্ষার্থীরা যে যার মত করে খেলা-ধূলা করছেন। ওই বিদ্যালয়ের কয়েকটি ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয় আর অন্য কয়েকটি ঘরে রাখা হয়েছে গরু-ছাগল আর ক্ষেতের ফষল। বিদ্যালয়ে সাদিকুল ইসলাম নামে একজন প্রক্সি শিক্ষক উপস্থিত থাকলেও রুবেল ইসলাম নামে অপর প্রক্সি শিক্ষকও অনুপস্থিত।
এ সময় কথা হলে উপস্থিত প্রক্সি শিক্ষক সাদেকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই বিদ্যালয়ে মোট তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। তারা নিয়মিত না আসায় মাসিক তিন হাজার টাকার বিনিময়ে আমি আর রুবেল নামে দুইজন প্রক্সি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস পরিচালনা করছি। আরা বিদ্যালয়ের কক্ষে এই এলাকার মানুষজন গরু ছাগল ও ক্ষেতের ফষল রাখেছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় তোযা মিয়া বাসিন্দা বলেন, শিক্ষকরা আসে না। মাসে এক দুই বার আসে। বিদ্যালয়ে কোন লেখাপড়া হয় না। তাই ক্লাস রুমে মানুষজন গরু-ছাগল ও ফষল রাখে। এই বিদ্যালয়ের বাচ্চারা এখনো ঠিকমত নিজের নাম ঠিকানা লিখতে পারে না। চরের বাচ্চারা কিছু পারে না।
এ সময় স্থানীয় আর এক বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, শিক্ষকরা মাসে এক দুই দিন আসে। আর শুধু বেতন ভাতা তুলে। নিজের ইচ্ছে খেয়ালমত বিদ্যালয় চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে সিন্দুর্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম উদ্দিন, চরের স্কুল তাই মাঝে মাঝে আমাদের আসতে দেরী হয়। আর সে কারণে দুই জনকে নেওয়া হয়েছে। সহয়তা করার জন্য। এটা প্রক্সি শিক্ষক নয়।
এ বিষয়ে সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, চরের বিদ্যালয় গুলোর বেহাল দশা। প্রক্সি শিক্ষক ও নিয়মিত শিক্ষকরা যায় কি না আমার জানা নেই। তবে কর্তৃপক্ষের উচিত চরের বিদ্যালয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসি বেগম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় পাঠদান করানোর কোন নিয়ম নেই। এ ধরনের কাজ কোন বিদ্যালয় করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও দুলাল হোসেন বলেন, বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হবে।