মো: সাইফুল্লাহ খাঁন, (কলামিস্ট ও সাংবাদিক) :বর্তমান যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মোবাইল অ্যাপ ছাড়া দৈনন্দিন কাজ কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা অ্যাপ ডাউনলোড করা, স্টোরেজ সমস্যা, আপডেটের ঝামেলা—এসবের সমাধান নিয়ে এসেছে একটি আধুনিক প্রযুক্তি: প্রগ্রেসিভ ওয়েব অ্যাপ বা PWA।
PWA এমন এক ধরনের অ্যাপ যা ওয়েবসাইটের মতোই ব্যবহার করা যায়, কিন্তু মোবাইল অ্যাপের প্রায় সব সুবিধাই এতে পাওয়া যায়। আসুন জেনে নিই, কী এই PWA, এর সুবিধা, ব্যবহার, এবং কেন এটিকে মোবাইল অ্যাপের ভবিষ্যৎ বলা হচ্ছে।
কী হচ্ছে PWA?
PWA মূলত এমন ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন যা ওয়েব ব্রাউজারে লোড হয়, তবে সেটি ইনস্টলযোগ্য, অফলাইনেও কাজ করে, এবং নেটিভ অ্যাপের মতো দ্রুত ও স্মুথ। এটি HTML, CSS, JavaScript ইত্যাদি ওয়েব প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হয়, কিন্তু ব্যবহারকারীর দৃষ্টিতে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ মোবাইল অ্যাপের মতো।
PWA-এর মূল বৈশিষ্ট্য :
1. ইনস্টলযোগ্য: ব্যবহারকারী চাইলে সরাসরি ব্রাউজার থেকেই অ্যাপটি হোম স্ক্রিনে ইনস্টল করতে পারেন। প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোরের দরকার হয় না।
2. অফলাইন সাপোর্ট: PWA "Service Worker" প্রযুক্তি ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক না থাকলেও নির্দিষ্ট কিছু ফিচার অফলাইনে চালাতে পারে।
3. ফাস্ট এবং লাইটওয়েট: PWA সাধারণত নেটিভ অ্যাপের তুলনায় অনেক হালকা এবং দ্রুত লোড হয়।
4. পুশ নোটিফিকেশন: ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন আপডেট জানাতে পুশ নোটিফিকেশন পাঠানো সম্ভব।
5. ক্রস-প্ল্যাটফর্ম: একটি অ্যাপই অ্যান্ড্রয়েড, iOS, ডেস্কটপ—সব প্ল্যাটফর্মে চলতে পারে।
কেন PWA ভবিষ্যতের মোবাইল অ্যাপ?
স্টোরেজের সমস্যা থেকে মুক্তি:
অনেক ব্যবহারকারী কম স্টোরেজ সমস্যায় ভোগেন। PWA ইনস্টল হয় কম জায়গায়, অনেক ক্ষেত্রেই ১ এমবিরও কম।
আপডেট ঝামেলামুক্ত:
প্লে স্টোরের মাধ্যমে আপডেট না করেও, ব্যাকএন্ডে আপডেট করে ব্যবহারকারীদের সর্বশেষ ভার্সন দেওয়া যায়।
উন্নয়ন খরচ কম:
একটি অ্যাপ তৈরির জন্য আলাদা করে অ্যান্ড্রয়েড ও iOS ভার্সন বানানোর দরকার নেই। একটি কোডবেসেই কাজ হয়।
কম ইন্টারনেটেও ব্যবহারযোগ্য:
অফলাইন মোড, ক্যাশিং—এসব সুবিধার কারণে দুর্বল নেটেও ব্যবহার করা যায়।
সফল কিছু PWA উদাহরণ
Twitter Lite: টুইটারের লাইট ভার্সন হিসেবে PWA তৈরি করে অনেক ইউজারের কাছে পৌঁছেছে।
Pinterest: তাদের PWA সংস্করণ চালুর পর ইউজার এনগেজমেন্ট ৬০% বেড়েছে।
Forbes, Flipkart, Starbucks: এদের PWA সংস্করণ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এবং পারফর্মেন্সে বিপ্লব এনেছে।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে ইন্টারনেট স্পিড ও ডিভাইস স্টোরেজ সীমিত, সেখানে PWA হতে পারে আদর্শ সমাধান। অনলাইন শপ, সংবাদপত্র, সরকারি সেবা, শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম—সব ক্ষেত্রেই PWA ব্যবহার করে খরচ কমিয়ে ইউজার বেইজ বাড়ানো সম্ভব।
চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা
কিছু iOS ডিভাইসে এখনো PWA-এর পূর্ণাঙ্গ সাপোর্ট নেই।
হার্ডওয়্যার অ্যাকসেস (যেমন: ব্লুটুথ, সেন্সর) সবসময় নেটিভ অ্যাপের মতো শক্তিশালী নয়।
ব্যবহারকারীদের অনেকে এখনো জানেন না PWA কীভাবে ইনস্টল বা ব্যবহার করতে হয়।
প্রগ্রেসিভ ওয়েব অ্যাপ নিঃসন্দেহে প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এটি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের ধরন পরিবর্তন করতে পারে। বিশেষ করে যেসব জায়গায় নেটিভ অ্যাপ বানানো ব্যয়বহুল বা পরিচালনা করা কঠিন, সেখানে PWA হতে পারে ভবিষ্যতের আদর্শ পথ।
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার, ব্যবসায়ী এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এখন থেকেই এই প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দেওয়া, কারণ ভবিষ্যতের দরজা ইতোমধ্যেই খুলে গেছে—প্রগ্রেসিভ ওয়েব অ্যাপ দিয়ে।
যোগাযোগ :
বাসা নং-১৯, ৫ম তলা, রোড-৭/এ,
ব্লক-বি, বারিধারা, গুলশান, ঢাকা-১২১২
সম্পাদক ও প্রকাশক : নাজমা সুলতানা নীলা
মোবাইল: ০১৬২২৩৯৩৯৩৯
ইমেইল: nazmaneela@gmail.com