হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম: ‘আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের জন্য লড়াই করেছিলাম। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে আমরা বিজয়ের একটি ধাপ পুরণ করেছি। আমাদের দ্বিতীয় ধাপ পুরণ করতে হলে বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে হবে। আমরা ৩ তারিখ আমরা বাংলাদেশ পূণর্গঠনে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ইশতেহার ঘোষণা করবো। আমরা আপনাদের অগ্রিম দাওয়াত দিয়ে গেলাম ৫আগস্ট যেভাবে ঢাকায় এসেছিলেন সেভাবে ৩ আগস্ট শহিদ মিনারে আবার দেখা হবে আপনাদের সাথে আমাদের। গণঅভ্যুথানকে যারা ব্যর্থ করতে চাচ্ছে, এই গণঅভ্যুথানের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করতে চাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রতিহত করবো ৩ আগস্ট শহিদ মিনারে।’
বুধবার (২ জুলাই) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে কুড়িগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্টে বাঘ চত্বরে পদযাত্রা শেষে পথসভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি পদযাত্রা নিয়ে বলেন, ‘দেশ গড়ার ডাক দিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশে পূণর্গঠনের আহবান জানিয়ে এই পদযাত্রা শুরু করেছি। এই পদযাত্রা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়-উপজেলায়, গ্রামে-গঞ্জে আলোড়িত করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। প্রিয় কুড়িগ্রামবাসী আপনারা জানেন ২০২৪ শে গণঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার আমাদের মনে করিয়ে দেয় কোন স্বৈরাচার, কোন ফেরাউন ক্ষমতার মসনদে চিরকাল বসে থাকতে পারে না। যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে যারা মানুষের অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, যারা সন্ত্রাস, দখলদার এবং চাঁদাবাজদের পক্ষে দাঁড়াবে তাদের বিরুদ্ধে বারবার গণঅভ্যুথান তৈরি হবে।’
নাহিদ ইসলাম কুড়িগ্রামকে নিয়ে বলেন, ‘কুড়িগ্রাম তিস্তা চুক্তির লড়াই, কুড়িগ্রাম মানে তারামন বিবির অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া, কুড়িগ্রাম মানে ২৪ শের গণঅভ্যুথানে শহীদ হওয়া আমার ভাইয়েরা। আমরা জানি সেই বৃটিশ আমল থেকে সিপাহী বিদ্রোহে, সেই ফকির সন্যাসী আন্দোলন থেকে কুড়িগ্রামের মানুষরা বারবার রক্ত দিয়েছে, লড়াই করেছে। এই সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে কুড়িগ্রাম সবসময় প্রতিরোধ তৈরি করেছে সীমান্তে। কুড়িগ্রাম সবসময় নির্যাতিত হয়েছে, অবহেলিত হয়েছে, বৈষম্যের শিকার হয়েছে। কুড়িগ্রামকে যাতে কখনোই অবহেলা করা না হয় সেভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি এবং কৃষি খাতে আমাদের কাজ করতে হবে। সরকারের কাছে আমরা আহবান জানাই অবশ্যই তারা কুড়িগ্রামের দিকে তাকাবে। কুড়িগ্রাম যাতে আঞ্চলিক বৈষম্যের শিকার যাতে না হয়। এ বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।’
‘তিনি সীমান্ত হত্যা ও ফেলানী হত্যা নিয়ে বলেন, সীমান্তে আমাদের যে ফেলানীর লাশ ঝুলেছিল, আমরা সেই ফেলানী হত্যার বিচার আজও পাইনি। আজও সীমান্তে আমাদের ভাইয়েরা মারা যায়। আজও খুনি বিএসএফ বাহিনী গুলি করার সাহস পায়। প্রিয় বন্ধুগণ ভারতের দালালীর দিন শেষে, গোলামীর দিন শেষ এবার আগামির বাংলাদেশ আমাদের স্বাধীনতার দেশ আমাদের মর্যাদার বাংলাদেশ। আমরা সীমান্তে আর একটি হত্যাকান্ড মেনে নিবো না।’
এছাড়াও তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের উপর পুলিশের হামলা নিয়ে বলেন, ‘আমরা গতকাল একটি নিউজ দেখেছি চট্রগ্রামের পটিয়াতে এই বৈষ্যম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই গণঅভ্যুথানের সৈনিকদেরকে আবারো আক্রমন করা হয়েছে, আবারো পুলিশি হামলা করা হয়েছে। আমরা হুসিয়ারী করে দিতে চাই আবারো এই গণঅভ্যুথানের অগ্রনায়কদের আমার শিক্ষাার্থী ভাই-বোনদের নির্মমভাবে অন্যায়ভাবে কেউ হাত তোলে তাহলে কিন্তু এর ফলাফল ভাল হবে না। আমরা আর হানাহানি চাই না। আমরা চাই পুলিশের সংস্কার হবে। পুলিশ অন্যায়ভাবে কারো উপর হাত তুলবে না। জনগণের জায়গা থেকে আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবো এবং সকলে মিলে একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়বো।
নাহিদ ইসলাম বর্তমান প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারী দোসরদের উদ্যোশে বলেন, ‘আমরা এই ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী ব্যবস্থা বিলোপের জন্য একদফা দাবী ঘোষণা করেছিলাম। সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও সেই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা কিন্তু রয়ে গেছে। সেই মাফিয়াতন্ত্র, সেই সন্ত্রাস, সেই দখলদারিত্য কিন্তু রয়ে গেছে। ফলে আমরা মনে করি আমাদের এই লড়াই শেষ হয় নাই। সেই লড়াই চলমান রাখার জন্য নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা আপনাদেরকে আহবান জানাচ্ছি।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ দুপুর দেড়টার দিকে রংপুর থেকে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় পৌঁছান। এখানে পদযাত্রা ও পথসভা শেষে আধাঘন্টা পর কুড়িগ্রামের পথে রওয়ানা দেন। এসময় তার সাথে সাথে শতশত কর্মী-সমর্থকরা গাড়ী বহরে তার সাথে কুড়িগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট বাঘ চত্বরে এসে পথসভায় মিলিত হন। এখানে হাজার-হাজার কর্মী-সমর্থক তাকে সম্ভাষণ জানায়।
এখানে আয়োজিত পথসভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন এনসিপির উত্তর অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এনসিপির দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সামান্তা শারসিন, যুগ্ম আহবায়ক ড. আতিক মুজাহিদসহ কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
পথসভায় নাহিদ ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলার সন্তান ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ড. আতিক মুজাহিদকে কুড়িগ্রাম-২ আসনের প্রার্থী হিসেবে সকলের সমর্থন চেয়ে সমাবেশ শেষ করেন।
পরে নেতৃবৃন্দ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কুড়িগ্রাম থেকে নাগেশ^রী উপজেলা হয়ে ফুলবাড়ী উপজেলায় আরো একটি পথসভায় অংশ নিয়ে লালমনিরহাট জেলার উদ্যোশে যাত্রা করবেন বলে জানা গেছে। এনসিপির এই পদযাত্রা ও পথসভায় সাধারণ মানুষসহ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। এনসিপির নেতৃবৃন্দের কথা শুনতে যাত্রাপথের বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে উৎসাহ নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে।
যোগাযোগ :
বাসা নং-১৯, ৫ম তলা, রোড-৭/এ,
ব্লক-বি, বারিধারা, গুলশান, ঢাকা-১২১২
সম্পাদক ও প্রকাশক : নাজমা সুলতানা নীলা
মোবাইল: ০১৬২২৩৯৩৯৩৯
ইমেইল: nazmaneela@gmail.com