বিশেষ প্রতিনিধি:-রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শাহজাহানপুর এলাকায় উন্নয়নের নামে জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। 'ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১' প্রকল্পের আওতায় সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বহু পরিবার, যাদের একমাত্র আশ্রয় এই জমিগুলিই।
এলাকার প্রবীণ নাগরিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব এম. এ. রশিদের পরিবারের নামে থাকা দীর্ঘদিনের পৈতৃক সম্পত্তিও এই জবরদস্তিমূলক অধিগ্রহণের আওতাভুক্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পরিবারটি বহুবার মানবিক ও আইনগত বিবেচনায় জমি অধিগ্রহণ থেকে অব্যাহতির আবেদন করলেও, তা আমলেই নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহ।
ভুক্তভোগী পরিবারের একজন সদস্য বলেন,
"এই জমি আমাদের পরিবারের শেষ সম্বল। এখানে আমরা বহু প্রজন্ম ধরে বসবাস করছি। উন্নয়নের কথা বলে যদি পরিবার-পরিজন নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়, তাহলে সে উন্নয়নের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন থেকে যায়।"
তারা আরো জানান যে, ইতিমধ্যে তাদের পরিবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একাধিক জনপ্রয়োজন ও জনস্বার্থমূলক প্রকল্পে জমিদান অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে - মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদবাগ মসজিদ, বাংলাদেশ রেলওয়ে সম্প্রসারণ, ডিআইটি রোড, শাহজাহানপুর কবরস্থান, সিটি কর্পোরেশন মার্কেট সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রকল্প তাদের পারিবারিক সম্পত্তি অধিগ্রহণ বা দানের মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শেষ বসতবাড়ি সম্পত্তিটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করে আসছে। উক্ত সম্পত্তিগুলো পূর্বে অধিগ্রহণ করা সত্ত্বেও তাদের পরিবার আজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পায় নাই। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত জমির অপর পাশে খালি সরকারি খাস জমি বর্ণিত নির্মাণের জন্য রয়েছে, যা পূর্বে তাদের পরিবার থেকে অধিগ্রহণকৃত। মূল স্টেশনটি রাজারবাগ মোড়ে স্থাপনের পরিকল্পনা হয়েছে, তবে শাহজাহানপুরের দিকে ভূমির নিচে প্রায় ৩০০ ফিট দূরত্বে সুরঙ্গপথ খনন করে এন্ট্রি-এক্সিট নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জাইকা (JICA)-র সহায়তায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু স্থানীয়দের বক্তব্য, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের স্থানীয় পরামর্শ বা জনসভার আয়োজন ছাড়াই সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির পরিপন্থী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উন্নয়ন অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু তা হতে হবে মানবিকতা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনসাধারণের মৌলিক অধিকারকে উপেক্ষা করে উন্নয়নের নামে বাস্তুচ্যুতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এখন দেখার বিষয়, জনগণের আহ্বানে সরকার মানবিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে কিনা, নাকি 'উন্নয়ন' নামক বুলডোজার নিরীহ মানুষদের ঘরবাড়ি চুরমার করেই সামনে এগিয়ে যাবে।
ভুক্তভোগীরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
যোগাযোগ :
বাসা নং-১৯, ৫ম তলা, রোড-৭/এ,
ব্লক-বি, বারিধারা, গুলশান, ঢাকা-১২১২
সম্পাদক ও প্রকাশক : নাজমা সুলতানা নীলা
মোবাইল: ০১৬২২৩৯৩৯৩৯
ইমেইল: nazmaneela@gmail.com