জেল হত্যা মামলার সন্দেহভাজন সাবেক হাই কমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার সব ধরনের আইনি প্রচেষ্টা চালাবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বুধবার মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ তাদের ডিপোর্টেশন সেন্টার থেকে সাবেক এই কূটনীতিককে মুক্তি দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা খবরটা পেয়েছি। যত ধরনের আইনি প্রক্রিয়া আছে, সেগুলোতে আমরা প্রচেষ্টা চালাব।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের ক্রিমিনাল যারা তাদেরকে স্বদেশে এনে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করি। অনেকে লুকিয়ে থাকে। কিন্তু কারও যদি ঠিকানা বা অবস্থান পাই, আমরা আইনি প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিই।
এ বিষয়ে আইনজীবী নিয়োগ করা হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমি জানি না।
১৯৭৫ সালের জেল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে। তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে সামরিক কর্মকর্তা এম খায়রুজ্জামান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি সরকার তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেল হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে নাম এলে সে সময় ফিলিপিন্সের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা খায়রুজ্জামানকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়। ওই বছর ২৪ সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেফতার করে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
পরে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে জামিনে মুক্ত হন খায়রুজ্জামান। ২০০৩ সালের ৪ মে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
পরের বছর একটি আদালত জেল হত্যা মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে তাকে হাই কমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা হয়। কিন্তু বিপদ বুঝে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নেন এবং সেখানেই থেকে যান।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার আমপাং, সেলাঙ্গর এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেফতার করে সে দেশের পুলিশ।
পরদিন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জাইনুদিনের বরাতে মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার জানায়, একটি অভিযোগ থাকায় খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ‘তার দেশের একটি অনুরোধ রয়েছে’।
খায়রুজ্জামান গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ঠেকাতে তৎপর হন তার স্ত্রী রিটা রহমান। তার পক্ষে আইনজীবী আবতার সিংহ ঢালিওয়াল মালয়েশিয়া সরকারকে উকিল নোটিস পাঠান। তাতে সাড়া না পেয়ে তারা আবেদন করেন কুয়ালালামপুরের হাই কোর্টে।
রিটা রহমানের দাবি, কোনো ‘অন্যায় না করলেও ‘তার স্বামীকে মালয়েশিয়ায় ‘খামোখা’ গ্রেফতার করা হয়েছে।