• আজ ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম

২৯ দিন পর খুলছে সেই কলেজ, অধ্যক্ষ ফিরবেন না ক্লাশে

| নিউজ রুম এডিটর ৯:৫৩ অপরাহ্ণ | জুলাই ১৫, ২০২২ লিড নিউজ, শিক্ষাঙ্গন

নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনার ঘটনায় ২৯ দিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর রোববার থেকে কলেজ খুলবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি অ্যাডভোকেট অচীন চক্রবর্তী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে প্রাণের ভয়ে এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে রোববারই কলেজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীরাও সেই লাঞ্ছিত অধ্যক্ষকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু সবার মধ্যে উচ্ছ্বাস থাকলেও অধ্যক্ষের পরিবারের মধ্যে ভর করেছে আতঙ্ক। তাই চলমান পরিস্থিতির কারণে এখনো কলেজে যেতে ভরসা ভরসা পাচ্ছেন না অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।

গভর্নিং বডির সভাপতি অচীন চক্রবর্তী বলেন, কলেজের পরিচালনা পর্ষদের এক জরুরি সভায় কলেজ খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক আগামীকাল (রোববার) কলেজ খোলা হবে।

তিনি আরও বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস যোগদান করবেন কিনা তা এখনো তিনি জানাননি। তবে তাকে (অধ্যক্ষে) যোগদান করতে অনুরোধ করেছি এবং তার যোগদান করা উচিত। তিনি যদি কলেজে যোগ দেন তাহলে আমরা গভর্নিং বডির সদস্যরা, শিক্ষক-কর্মচারী ও এলাকার সুধীজন সবাই মিলে তাকে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষের মা বনলতা বিশ্বাস বলেন, স্বপন (অধ্যক্ষ) কলেজে যাবে কিনা সেটা আমরা বলতে পারি না। কারণ ঘটনার পর থেকে আমাদের সঙ্গে তার কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই। আমার সন্তানকে যেভাবে জুতার মালা পরিয়ে অপমান, অপদস্ত করা হয়েছে, ঠিক সেইভাবে যদি জনসম্মুখে ফুলের মালা পরিয়ে তাকে বরণ করে নেয় তাহলেই কলেজে যোগদান করবে সে- এটাই আমার চাওয়া।

তিনি আরও বলেন, কোনো পারিপার্শ্বিক চাপ আমরা অনুভব করছি না। তবে আমরা মানসিকভাবে অনেক দুর্বল। ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি কলেজ কর্তৃপক্ষ, ম্যানেজিং কমিটির কেউ, এলাকার কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তি, এমনকি কোনো শিক্ষার্থীও আমাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি। নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় শুধু অধ্যক্ষ নয়, তার কন্যারাও ক্লাশে ফিরবেন না বলেও তিনি জানান।

গভর্নিং বডির অন্যতম সদস্য ও বিছালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে এতদিন কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বেশ অবনতি হয়েছে। আগামীকাল থেকে কলেজ খুলবে এবং ক্লাশ শুরু হবে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে যে লাঞ্ছনা করা হয়েছে। এখন আমরা এলাকাবাসী, শিক্ষক-কর্মচারীরা ও শিক্ষার্থীরাও তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিতে প্রস্তুত। এখন থেকে সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

নড়াইল সদর থানার ওসি, চলতি দায়িত্বে ও পরিদর্শক (তদন্ত) মাহদুদুর রহমান বলেন, কলেজ খোলার বিষয়ে আমি এখন পর্যন্ত অবগত হয়নি। রোববার যদি কলেজ খোলে এবং ডিসি মহোদয় আমাকে নির্দেশ দেয়, তাহলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুন অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। ওই দিন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় ওরফে বাপ্পী রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে পোস্ট করেন- ‘প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম’।

বিষয়টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে কলেজের কিছু ছাত্র তাকে সেটি মুছে (ডিলিট) ফেলতে বলেন। এরপর ১৮ জুন সকালে অভিযুক্ত ছাত্র কলেজে আসলে তার সহপাঠীসহ সব মুসলিম ছাত্র তার গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তাৎক্ষণিক বহিষ্কারের দাবি তুলে অধ্যক্ষের কাছে বিচার দেয়। কিন্তু ওই সময় ‘অধ্যক্ষ একই সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় তাকে রক্ষা করার চেষ্টায় ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন- এমন কথা রটানো হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় বিষয়টি কলেজের গণ্ডি ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা অভিযুক্ত ছাত্রের সঙ্গে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধেও ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে।

একপর্যায় পুলিশের সঙ্গে উত্তেজিত জনতার মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। ওই সময় বিক্ষুব্ধ জনতা কলেজের অধ্যক্ষসহ হিন্দু শিক্ষকদের ৩টি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরপর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের উপস্থিতিতেই উত্তেজিত জনতা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায়ও জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করে।