• আজ ২রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
 এনসিপির সমাবেশে হামলা: সরকারের কঠোর বার্তা | সারাদেশে ব্লকেডের ডাক দিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন | গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্র, ১৪৪ ধারা জারি | মধ্যরাতে চরমোনাই পিরের দরবারে এনসিপির নেতারা | বিএনপিকে এত সহজে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না: মির্জা ফখরুল | এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নাম থাকবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা | একটি পক্ষ সন্ত্রাস ও চাঁদবাজদের লালন করে ক্ষমতায় যেতে চায়: নাহিদ ইসলাম | চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে হত্যা যুবদল নেতার, ভিডিও ভাইরাল | পানিহাটা সীমান্তে ১০ বাংলাদেশীকে বিএসএফের পুশইন | ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার |

৩৩৫ টাকার জিরা ভোক্তা কিনছে ১০০০ টাকায়!

| নিউজ রুম এডিটর ২:২৯ অপরাহ্ণ | জুন ২৭, ২০২৩ জাতীয়

কুরবানির ঈদ ঘিরে মসলাজাতীয় পণ্যের বাজারে অস্থিরতা চলছে। বাড়তি মুনাফা করতে ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে দাম। পরিস্থিতি এমন-কেজি প্রতি ৩৩৫ টাকায় আমদানি করা জিরা খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৩০ টাকা কেজির আদা ক্রেতাকে ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি এলাচ, লবঙ্গ, গোলমরিচ ও দারুচিনির দামও হুহু করে বেড়েছে। সঙ্গে ঈদ ঘিরে পোলার চাল, চিনি ও সেমাই কিনতেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি মূল্য। এরপরও বাজার তদারকি সংস্থাগুলো একপ্রকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছর কুরবানির ঈদ এলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। তবে এবার সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

এদিকে মসলার বাজারে অস্থিরতা কমাতে ২৮ মে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করেন। সভায় জানানো হয়, প্রতি কেজি আদার আমদানি মূল্য ১২৯-১৩০ টাকা। কিন্তু রাজধানীর সর্ববৃহৎ আড়ত শ্যামবাজারে ২৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়। আদার দাম বাড়াচ্ছেন শ্যামবাজারের আড়তদাররা। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজেই অসাধুদের চিহ্নিত করেন। কিন্তু ওই সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পাশাপাশি একই সভায় জিরার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি কেজি জিরা আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৩৩২-৩৩৫ টাকা। কিন্তু ওই সময়ে বাজারে ৮০০-৮৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এলসি থেকে খুচরা বাজারে দামের অনেক পার্থক্য।

এদিকে ওই সভায় কারসাজির তথ্য জানলেও এবং দোষীদের চিহ্নিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে মহাপরিচালক দায় সারেন।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবছর ঈদ, রোজাসহ ধর্মীয় উৎসব এলেই একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বড়িয়ে দেয়। এবারও তাই হয়েছে। কুরবানির ঈদের আগেই ধাপে ধাপে মসলাজাতীয় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। শুধু তাই না, এবার মূল্য বাড়িয়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যা অন্য বছরের তুলনায় রেকর্ড ভেঙেছে। যারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন, তারাও নিশ্চুপ। তাদের কাছে তথ্য থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তাই অসাধুরা আরও বেশি সুযোগ পেয়েছে।

সোমবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দিন প্রতি কেজি জিরা ৯৫০-১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা রোজার ঈদের আগে ৪৫০ টাকা ছিল। লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা কেজি, যা ওই সময়ে ১৩০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ভালোমানের এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২১০০ টাকা, যা কয়েকদিন আগে ২০০০ টাকা ছিল। ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দারুচিনি ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাদা গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা, যা রোজার সময়ে ৯০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, যা ৪৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া রসুন ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৬০০ টাকা কেজির শুকনা মরিচ ৭০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে সোমবার কথা বলে আরও জানা যায়, প্রতি কেজি পোলাও চাল ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার ঘি বিক্রি হচ্ছে ১৩৬০ টাকা। ২০০ গ্রাম প্যাকেটজাত চিকন সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা আর লাচ্চা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকা।

রাজধানীর কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. রাসেল বলেন, কুরবানির ঈদ এলেই প্রতিটি পরিবারে বিভিন্ন ধরনের মসলার চাহিদা বাড়ে। এর সুযোগ নিয়ে প্রতিবছর এই সময়ে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দেয়। এবার মনে হচ্ছে দাম অনেক বাড়িয়েছে। দেখারও যেন কেউ নেই।

রাজধানীর জিনজিরা কাঁচাবাজারের মুদি বিক্রেতা মো. সাক্কুর আলম যুগান্তরকে বলেন, পাইকারি বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছে। সরকারের তদারকি সংস্থা জানে কে বা কারা পণ্যের দাম বাড়ায়। কিন্তু তাদের শাস্তি হয় না। শাস্তি হয় আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদের।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মসলাজাতীয় পণ্যের দাম কমাতে অধিদপ্তরে সভা হয়। সেদিন থেকেই মহাপরিচালকের নির্দেশে পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান পরিচলনা করা হয়। এখন পর্যন্ত তদারকি চলমান আছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।