ছাত্র-জনতার অভুতপূর্ব অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরের গুমখুন, লুটপাটের ভয়াবহ এক শাসন থেকে মুক্তি পায় বাংলাদেশের মানুষ। প্রায় ২ হাজার শহিদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয় মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলা গণহত্যাকারী হাসিনা। দেশের মানুষকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা উপহার দিয়ে হৃদয়ে জায়গা করে নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ৫ আগস্টের পর ড. মহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে রাখা হয় শিক্ষার্থীদেরও। গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখতে সরকারকে তদারকি এবং সংস্কার কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশীদ্বারিত্ব নিশ্চিতেই তাদের যুক্ত করা হয়।
একটা প্রবাদ আছে, ‘স্বাধীনতা অর্জনের থেকে রক্ষা করা কঠিন’। ক্ষমতার স্বাদ পেলে বিচ্যুতি ঘটে। কিছু সমন্বয়কদের ক্ষেত্রে হয়তো সেটাই হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের নায়ক সমন্বয়করা মাথার মুকুট হয়ে থাকবেন- এটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু সেই গৌরবকে ধরে রাখতে তাদেরকে সতর্কতা ও সততার সাথে সামনে এগোতে হবে।
গেল কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে সমন্বয়কদের ওপরে দেশের বেশ কিছু জায়গায় হামলা ও হত্যা চেষ্টা হয়েছে। এসব ঘটনার পেছনে একদিকে যেমন পতিত স্বৈরাচারদের ষড়যন্ত্র রয়েছে। অন্যদিকে কিছু সমন্বয়কের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডকেও দায়ী করা হচ্ছে। বিতর্কিত কাজে জড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে এমন দাবিও একেবারে ফেলে দেয়া যায় না।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু সমন্বয়ক নিজেদের মূল কার্যক্রম থেকে বিচ্যুত হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক কার্যক্রমে নজরদারি, তদবির, খবরদারিতে জড়িয়ে পড়ছেন। অপ্রয়োজনীয়ভাবে এখানে-সেখানে যাচ্ছেন। বিভিন্ন বাসস্টেশন বাজার ঘাট জেলা প্রশাসক অফিস সরকারি দপ্তর এমনকি সচিবালয় প্রভাব বিস্তার করছেন তারা। এতে কিছু মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়ে খাকতে পারে।
এদিকে, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াতে গিয়ে জাতীয় ইস্যুতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পিছিয়ে পড়ছে সমন্বয়করা। ফলে সম্প্রতি তাদের ডাকা কিছু আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম দেখা গেছে।
সম্প্রতি ভারতের ষড়যন্ত্র ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শক্তিশালী কোনো প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যায়নি। যেখানে দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে বিশাল মিছিল করেছে। জামায়াতও একই ইস্যুতে সরব রয়েছে। কিন্তু সমন্বয়করা যে পিছিয়ে রয়েছে তা স্পষ্টই দৃশ্যমান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
নেটিজেনদের দাবি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে সরকারি কর্মকাণ্ডে অযাচিত হস্তক্ষেপ করা যাবে না। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কিছু কিছু তথাকথিত ছাত্রনেতার টাকা পয়সার বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্যে বন্ধ করতে হবে।
নেটিজেনরা বলছেন, সমন্বয়করা বিতর্কিত ও অপ্রয়োজনীয় কাজে জড়িয়ে পড়লে অন্তর্বর্তী সরকার প্রশ্নের মুখে পড়বে। বিশেষ করে জনগণ তাদের প্রতি আস্থা হারাবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ না করে বরং তাদের সহযোগিতা করা দরকার। অসংখ্য শাহাদাতের বিনিময়ে আমরা এই দেশ স্বৈরশাষক থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু সমন্বয়করা পথ হারিয়ে অযাচিত হস্ততক্ষেপ করলে, বিতর্কিত কাজে জড়িয়ে পড়লে তাহলে দেশে আবার অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে।