• আজ ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলছে সুন্দরবনের দ্বার, মাছ শিকারে ব্যাপক প্রস্তুতি জেলেদের

| নিউজ রুম এডিটর ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫ সাতক্ষীরা, সারাদেশ

 

এমএ মামুন, সাতক্ষীরা: ভোরের আলো ফোটার আগেই মোংলার চিলা ঘাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জেলে হামিদ। হাতে পুরনো জাল, সেটি সেলাই করছেন মনোযোগ দিয়ে। পাশেই তার ছোট ছেলে, বাবাকে পানি এগিয়ে দিচ্ছে। তিন মাসে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে কোনো আয় না থাকায় ছেলের স্কুলে খাতা-কলম কেনা হয়নি, সংসার চালাতে স্ত্রীর সোনার কানের দুল বন্ধক রাখতে হয়েছে। তবুও জলিলের চোখে-মুখে এখন নতুন উচ্ছ্বাস- কারণ ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবার উন্মুক্ত হচ্ছে সুন্দরবন। নৌকা-জাল নিয়ে নদীতে নামতে পারবেন তিনি। এই গল্প শুধু হামিদের নয়; সুন্দরবন ঘিরে বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরার প্রায় ৩০ হাজার জেলে পরিবারের তিন মাসের না বলা কষ্টের প্রতিচ্ছবি এটি।

সুন্দরবন উন্মুক্ত হওয়ার খবরে ইতোমধ্যেই জলিলের মতো ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এই অঞ্চলের জেলেরা। কারও ট্রলার রঙ করা হচ্ছে, কারও জাল নতুন করে বোনা হচ্ছে। কেউবা পুরনো জালগুলো মেরামত করছেন, অনেকে আবার ধারদেনা করে নতুন নৌকা কিনছেন।

জেলেদের অনেকেই জানান, এবারের মৌসুমে নদীতে প্রচুর মাছ পাবেন বলে আশাবাদী তারা। তবে গত বছরের তুলনায় এবার জ্বালানি খরচ ও জাল-নৌকার মেরামতের খরচ অনেকটাই বেড়েছে। তা ছাড়া নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকি। তবে সরকার থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয় সেটি দিয়ে সংসার চলে না। যে কারণে অন্য কাজ করে উপার্জন করি। সরকার সুন্দরবন ও মাছ-কাঁকড়া রক্ষায় যে অভিযান চালায় সেটি আরও কঠোর এবং নেট জাল ও কারেন্ট জালের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধসহ অবৈধভাবে সুন্দরবনে চোরা শিকারি বন্ধ করা দরকার। তাহলে সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ-কাঁকড়া পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

জেলে আক্কাস শেখ, আকবর মালীসহ অনেকে জানান, তিন মাস ঘরে কোনো আয় ছিল না। দোকান থেকে বাকিতে চাল-ডাল এনেছি। এখন সুন্দরবনে গিয়ে মাছ ধরতে না পারলে দেনা শোধ করা সম্ভব হবে না। তবে যে হারে সুন্দরবনে ডাকাত বেড়েছে তাই নিয়ে চিন্তায় আছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি সুন্দরবনের ডাকত নির্মূলে পদক্ষেপ নেওয়া হতো তাহলে নিশ্চিন্তে মাছ, কাঁকড়া ধরতে পারতাম।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ফজলুল হক বলেন, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা, জীবজন্তু ও মাছের প্রজনন বাড়ানোর জন্য ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে নদ-নদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরা ও পর্যটক প্রবেশেরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে সুন্দরবনের মাছ ও কাঁকড়া ধরার ওপর নির্ভরশীল সম্প্রদায় সমস্যায় ছিল। আগামী ১ সেপ্টেম্বর সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। জেলে ও বাওয়ালিদের সুন্দরবনে ঢোকার পাস (অনুমতি) দেওয়া হবে। এজন্য আগে থেকে জেলে বাওয়ালির পাশাপাশি পর্যটক পরিবহনকারী ট্রলারমালিকেরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা দিপন চন্দ্র বলেন, সব জেলেকে আইন মেনে বনে প্রবেশ করতে হবে। বনরক্ষীদের টহল বাড়ানো হয়েছে। কেউ নিয়ম ভাঙলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে প্রতিটি জেলে পরিবারকে পর্যায়ক্রমে ১২০ কেজি করে চাল দেওয়ার সরকারি ঘোষণা থাকলেও বাস্তবে তা খুব কম মানুষের ঘরে পৌঁছেছে। ফলে তিন মাসে বহু পরিবারের দিন কেটেছে অনাহার-অর্ধাহারে।