সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি। তবে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নির্বাচন ডামাডোল। দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে জনসম্পৃক্ততা ও জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি চলছে কেন্দ্রে লবিং।
আগামী সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনো একক প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আর তার বিপরীতে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের ছয় নেতা। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে দুই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা আরও বাড়বে- এমন ইঙ্গিত মিলছে রাজনৈতিক মহলে। ২০১৮ সালে সিটি নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। শেষ সময়ে এসে প্রার্থিতার তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ও সহ-সভাপতি ফয়জুল আনোয়ার আলোয়ার। তবে শেষ পর্যন্ত দল আস্থা রেখেছিল পুরনো কান্ডারি কামরানের ওপরই। কিন্তু কামরানের অতিমাত্রার আত্মবিশ্বাস, ভুল কৌশল, নেতাকর্মীদের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব, দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা এবং সর্বোপরি দলের কতিপয় নেতার বিশ্বাসঘাতকতার কারণে দলের সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি কামরান।
কামরানকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হন বিএনপির আরিফ। এবার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম হাসান জেবুল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও কামরানপুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলু। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে প্রতিদিন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আসাদ উদ্দিন আহমদ, আজাদুর রহমান আজাদ ও এ টি এম হাসান জেবুল।
গত কয়েক মাস থেকে বর্ধিত ওয়ার্ডসহ পুরো সিটি করপোরেশন এলাকায় মতবিনিময় করে যাচ্ছেন আসাদ ও আজাদ। জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময়, বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও ক্রীড়ানুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তারা জনসম্পৃক্ততা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। কভিড সংকটকালে যখন বেশির ভাগ রাজনৈতিক নেতারা হাত গুটিয়ে ঘরবন্দি ছিলেন, তখন এ দুই নেতা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাদের এমন সাহসিক ও মানবিক কর্মকান্ড নগরজুড়ে প্রশংসিতও হয়।
এ ছাড়া এ টি এম হাসান জেবুল সম্প্রতি মতবিনিময় করে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ঘোষণা দিয়ে জনসংযোগে নেমেছেন। প্রায় প্রতিদিনই তিনি নগরীর বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময় চালিয়ে যাচ্ছেন। মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, অধ্যাপক জাকির হোসেন ও ডা. আরমান আহমদ শিপলুও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তৎপর রয়েছেন।
নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘গেলবার আমি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। দল বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের হাতে নৌকা তুলে দিলে আমি তার পক্ষে রাত-দিন কাজ করেছি। গেলবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ পাই। নির্বাচনে বেশির ভাগ ওয়ার্ডে দলীয় প্রতীক নৌকার ভরাডুবি হলেও আমার দায়িত্বে যে তিনটি ওয়ার্ড ছিল তার সব কটি কেন্দ্রে নৌকা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি পরিবারে জন্ম এবং চারবারের কাউন্সিলর হওয়ায় সিলেট নগরীতে আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। ২০ বছরের জনপ্রতিনিধির অভিজ্ঞতার আলোকে সিলেটকে আলোকিত ও উন্নত মডেল শহরে রূপান্তর করতে আমি দলের কাছে এবারও মনোনয়ন চাইব। আশা করি দল এবার আমাকে বঞ্চিত করবে না।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি সব সময় সাধারণ মানুষের রাজনীতি করেছি। করোনার ভয়াবহ সংকটকালেও আমি মানুষের পাশে ছিলাম, এখনো আছি। রাজনীতিকে পুঁজি করে আমি কখনো ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা করিনি। যে কারণে দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও আমাকে ভালোবাসে। তারা তাদের প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে দেখতে চায়। এজন্য তারা আমাকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অনুপ্রাণিত করছে। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ এবং একটি বাসযোগ্য সুন্দর-নির্মল মডেল নগরী উপহার দিতে আমি দলীয় মনোনয়ন চাইব। দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বিবেচনায় দল এবার আমাকে নিরাশ করবে না বলে আমার বিশ্বাস’।
এদিকে এখন পর্যন্ত সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে কি না সেটা পরিষ্কার নয়। যে কারণে দলের কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশীর দেখা মিলছে না মাঠে। তবে উন্নয়ন কর্মকান্ড তদারকির মাধ্যমে নিজের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান বিএনপি দলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
অসুস্থতার কারণে আরিফুল হক চৌধুরী ফোনে কথা বলতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহিবুল ইসলাম ইমন। যে কারণে নির্বাচন নিয়ে তার ভাবনা জানা যায়নি।