গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে শ্রমিক-কৃষকের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে, করপোরেট ব্যবসায়ীরা পাবেন সব সুবিধা আর অর্থমন্ত্রীর ক্লায়েন্টদের স্বার্থই রক্ষা করা হয়েছে।’
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পল্টন মোড়ে গণতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক ফোরাম আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, ‘জনপ্রশাসন, আমলা, সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর জন্য ব্যয় হবে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, প্রায় ৪২ %। চোখ বন্ধ করে বিভিন্ন দেশ থেকে যে ধার করেছেন সে ধার বাবদ যাবে প্রায় ১৬ শতাংশ। এর সবই শ্রমিক-কৃষকদের টাকা থেকে যাবে। কিন্তু করপোরেট ব্যবসায়ীদের পকেট থেকে ধার শোধ হবে না বরং তারা পাবে সব সুবিধা।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, বাজেটে শ্রমিক-কৃষকের কথা না বলায়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা না থাকায় আন্দোলন অব্যাহত রাখুন। কারণ কৃষক-শ্রমিকের মুক্তি না হলে দেশের মুক্তি হবে না। বাজেটে কৃষকের জন্য, শ্রমিকের জন্য কোথায় বরাদ্দ? উচ্চপর্যায়ের অফিসারদের ঠিকই বরাদ্দ দিয়েছেন। এই বাজেট কৃষক শ্রমিকদের বাঁচার পথ দেখাতে পারেনি।’
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘দেশের প্রত্যেকটা জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকায় বাবা-মা সন্তানসহ ৫ জনের পরিবারের খাবার খরচ যায় মাসে ২১ হাজার টাকা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ খরচ- এই সব মিলিয়ে কত টাকা লাগে তা প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় বোঝেন।’
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি একটা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, পদ্মা। আপনি পরিশ্রমে এত ক্লান্ত, এই ক্লান্তির কারণে সম্প্রতি আপনি গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে কী করেছেন তা কি একবার ভেবে দেখেছেন? বেতন বৃদ্ধি চাইলে আমও যাবে ছালাও যাবে, শ্রমিকদের আম-ছালা যাবে কিন্তু আপনার মসনদ থাকবে তো?’
এ সময় জাফরুল্লাহ শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যেভাবে দেশকে ভালোবাসেন, দেশের জন্য শ্রম দেন কিন্তু আপনারা কীভাবে চলাফেরা করেন সে ব্যাপারে সরকার বিন্দুমাত্র চিন্তা করে না।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের শুধু ২০ হাজার টাকা বেতন দিলে হবে না। তাদের সন্তানকে বিনা বেতনে শিক্ষা দিতে হবে, পরিবহণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি দুবছর ধরে বলছি, শ্রমিকদের রেশন দেন- যে রেশন আপনি সামরিক বাহিনীতে দিয়ে যাচ্ছেন। যে রেশন পুলিশ-গোয়েন্দা বাহিনীকে দিয়ে যাচ্ছেন।মাসে মাত্র ৪০০ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে বিনা পয়সায় সব প্রকার অপারেশন ও ওষুধপত্রসহ চিকিৎিসা ব্যবস্থা করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে জাফরুল্লাহ আরও বলেন, ‘আপনার নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার স্বপ্ন। নোবেল পুরষ্কার পেতে হলে আপনাকে বহুবার বলেছি, আমাদের সুপারিশ সুচিন্তিতভাবে আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে, শ্রমিকদের বেতন, বাড়ি ভাড়ার সাবসিডি, চিকিৎসা ভাতা, তাদের সন্তানদের শিক্ষা খরচ দিতে হবে। তাহলে পৃথিবী বুঝবে আপনি কার পক্ষের লোক, এখন পৃথিবী জানে আপনি করপোরেট শক্তির লোক।’
সমাবেশে শেষে বিক্ষোভ মিছিল পুরানো পল্টন থেকে বিজয় নগর কালভার্ট রোড হয়ে পল্টন মোড়ে গিয়ে মিছিল শেষ হয়। হুইল চেয়ারে বসে মিছিলে নেতৃত্ব দেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু।
মিছিলে গণতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক ফোরামের নেতাকর্মীরা তাদের দাবি আদায়ের বিভিন্ন স্লোগান দেন।
গণতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক ফোরামের সভাপতি আব্দুল আলীম স্বপনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আক্তার হোসেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু মিয়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদের ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান রিজু, শ্রমিক নেতা বাবুল বিশ্বাস, ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতা কাজী মো. নজরুল, শাফায়াত কামাল দিব্য, মোজাম্মেল হক মাষ্টার প্রমুখ।