প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, ‘একজন বাবা ১০০ শিক্ষকের সমান। বাবা সন্তানের মাথার ওপর বটবৃক্ষের মতো। যার স্নেহ অবারিত ধারায় শুধুই সন্তানের জন্য। বাবা মানে নির্ভরতা। বাবা নিখাদ আশ্রয়। উত্তপ্ত সূর্যের তলে সন্তানের শীতল ছায়া। বাবা মানে ভরসা। বাবা চির-আপন। বাবার তুলনা কেবল বাবার সঙ্গে করা চলে। যতোই বিপদ, ঝড় আসুক না কেন প্রতিটি সন্তানের জন্য বটবৃক্ষের মতো সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন বাবারাই।’
শনিবার বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বেসরকারি এনজিও লাইট হাউসের আয়োজনে ও ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের সদস্য সচিব ফারুক আহমেদ তালুকদার, লাইট হাউসের পরিচালক মো. সালাউদ্দিন। এছাড়া সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আজকের শিশু আগামীদিনের পিতা। তাই প্রতিটি সন্তানের কৈশোরকালীন সময়ে বন্ধু হয়ে তাদের পাশে থেকে বড় করার আহ্বান জানান ইকবাল সোবহান চৌধুরী। সভায় তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি দেশে বাবা নামক মানুষটি একাধারে সংসারে প্রধান অর্থ উপার্জনকারী এবং সকল প্রকার ব্যয় নির্বাহকারী। সন্তান, স্ত্রী এবং সংসারে অন্যান্য যারা বাস করেন তাদের দেখাশোনা, গাইড করা এবং সবার ভালো-মন্দের দায়িত্ব বাবাকেই নিতে হয়। হাদিসে আছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে নিহিত।”
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল। এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটির প্রচলন। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু। যার বাবা নেই একমাত্র সে-ই জানে বাবা না থাকার বেদনা। ‘বাবা’ শব্দটি পৃথিবীর সর্বত্র নিখাঁদ ভালোবাসার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। নানাদেশে ভাষা অনুযায়ী বাবাকে একান্ত নিজস্ব ভাষায় ডেকে থাকে সন্তানেরা।”
তিনি আরও বলেন, বাবার প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধাবোধ এবং ভালোবাসা প্রকাশের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করার প্রত্যয়ে আন্তর্জাতিক বাবা দিবসের সূচনা হয়েছিল। প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্ববাসী বাবা দিবসটি পালন করে থাকে। সে হিসেবে আগামীকাল বিশ্ববাবা দিসব। তবে বাংলাদেশে এখনো জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন শুরু হয়নি। কিছু কিছু এনজিও ও বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান দিসবটি পালন করে আসছে। লাইট হাউস তাদের মধ্যে অন্যতম, একারণে তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদ বলেন, লাইট হাউস পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত ওয়ার্ড এবং গাজীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় যুব ও কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। প্রকল্পের আওতায় যুব ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং রেফরেলের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের উদ্যোগে সংসার তথা সমাজে বাবার অবদানকে মূল্যায়ন কারার নিমিত্তে ‘আন্তজাতিক বাবা দিবস, ২০২২’ উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে লাইট হাউস। এ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নে সকল গণমাধ্যমকর্মীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সভায় জানানো হয়, বাবা দিবস পালনের জন্য লাইট হাউস বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে প্রচারণার জন্য উপকরণ-পোস্টার, লিফলেট তৈরি ও বিতরণ, মিডিয়া অ্যাডভোকেসি, স্থির র্যালিসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচারণা ও গম্ভীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া দিবসের তাৎপর্য এবং বাবার অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য টিভি টকশোর আয়োজন, অনলাইন সেমিনার। এসব কর্মসূচি লাইট হাউস ঢাকা সিটি করপোরেশন (উত্তর এবং দক্ষিণ) ও গাজীপুর জেলায় বাস্তবায়ন করবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাবা দিবস পালনের মাধ্যমে একদিকে বাবাকে যেমন সম্মানিত করা হবে, অন্যদিকে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাবাকে আরো দায়িত্বশীল করে তুলবে।