রাত পোহালেই উদ্বোধন হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে ঘুচে যাবে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর দূরত্ব। এ খুশিতে অনেকেই জড়ো হয়েছেন মাদারীপুরের শিবচর সভাস্থলে। রাজবাড়ী থেকে আসা জালালুদ্দিন বলেন, ‘আমরা আর ফেরিতে উঠব না। সেতু হয়ে শহরের দিকে যাব।’
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে মাদারীপুরের শিবচরে আয়োজিত হবে বিশাল জনসভা। শনিবার (২৫ জুন) সেতু উদ্বোধনের পরে জনসভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই এখন থেকেই আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে জনসভায় জড়ো হতে শুরু করেছেন নানাপেশার মানুষ।
সভাস্থলের একদিকে চোখে পড়ে গাড়ির ওপরে নৌকার বহর নিয়ে উল্লাস করতে থাকা একদল মানুষকে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুদিন আগে তারা রাজবাড়ী সদর থানা থেকে সভাস্থলে এসে পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে দেখার ইচ্ছা ও সেতু দিয়ে রাজধানী যাওয়ার জন্যই তাদের এ যাত্রা।
এদের মধ্যে কথা হয় জালালুদ্দিনের সঙ্গে। সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইতিহাস রচনা করে দিয়েছেন। এটা কেবল ব্যবসা বা উন্নয়নের ব্যাপার না, এটা আবেগের সেতু। আমাদের বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে।’
তিনি বলেন, একটা সময় ফেরি ছাড়া পদ্মা পাড়ি দেয়া অসম্ভব ছিল। ফেরিতে ঘণ্টাখানেক লেগে যেত। অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি সেবাগুলো বিপাকে পড়ত। কতো রোগী অসহায় অবস্থায় মারা গেছে তার হিসাব নেই। কিন্তু দুঃস্বপ্নের দিন শেষ হয়েছে। এখন মাত্র দশ মিনিটে সেতু পাড়ি দিয়ে প্রমত্তা পদ্মা পার হওয়া যাবে।
সেখানে কথা হয় আয়নাল হাওলাদারের সঙ্গেও। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমার বয়স ৮০ বছর। আজীবন পদ্মা পার হতে কষ্ট পেয়েছি। ভাবিনি মৃত্যুর আগে সেতু দেখে যেতে পারব। প্রধানমন্ত্রী আমার মনের সাধ পূরণ করেছেন, তাকে ধন্যবাদ।’
সভাস্থল থেকে একটু দূরে কথা হয় এক সাদমান সাকিব নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। সেতু হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সাকিব।
সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার আগে পদ্মা সেতু খুলে যাচ্ছে। এতে করে বেশ সুবিধা হলো। সহজেই এখন ঢাকার সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা দেয়া যাবে। আগে ভাবতাম ঢাকা পড়লে সহজে বাড়ি আসতে পারব না। এখন সেতু হয়ে যাওয়ায় সেই শঙ্কা নেই। চাইলে প্রতিসপ্তাহে বাড়ি ফেরা যাবে।’
পদ্মাসেতু নিয়ে একেকজনের ভাবনা একেক রকমের। একেকজন একেক রকমের স্বপ্ন নিয়ে আছেন। কিন্তু স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে এটা সহজেই অনুমেয়, স্বপ্ন অনেক রকমের থাকলেও, স্বপ্নের মূল কাঠামো এখন পদ্মাসেতু। সব জল্পনা-কল্পনা পেরিয়া রাত পোহালেই উদ্বোধন হবে সেতুটি।