• আজ ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিনমজুরকে মারধর করে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর, আদালতে মামলা!

| নিউজ রুম এডিটর ৯:৫১ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ আইন ও আদালত

ঠাকুরগাঁওয়ে ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: চোর অপবাদ দিয়ে জোতিষ বর্মণ (৩২) নামে এক দিনমজুরকে পিটিয়ে জখম করে ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগে উঠেছে বিনয় চন্দ্র বর্মণ গ্যাং এর বিরুদ্ধে। এঘটনায় গত ১৮ আগস্ট ঠাকুরগাঁও আদালতে বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর ভাই জগেন বর্মণ (৩০)। জোতিষ বর্মণ সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের মিলনপুর এলাকার ধীরেন বর্মণের ছেলে আর অভিযুক্ত বিনয় গ্যাং একই এলাকার বাসিন্দা।

মামলার এজাহার ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার (১৪ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে জোতিষ রাস্তায় হাটতে বের হন। এ সময় বিনয় চন্দ্র বর্মণ (৩৮) , ললিত চন্দ্র বর্মণ (৩২), রবীন বর্মণ (জাম্বু) (২৮), গৌরাঙ্গ বর্মণ (৩৫), হ্নতিক বর্মণ (২০) ও ছোরহাব উদ্দীন (৪০) চোর অপবাদ দিয়ে লাঠি-সোটা ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে জোতিষকে এলোপাথারি মারধর করে। এসময় জোতিষের পায়ের গোড়ালী ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। জোতিষ মাটিয়ে পড়ে গেলে বিনয় গ্যাং তাকে গাছে বেঁধে রাখেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী বাঁধা দিতে আসলে অভিযুক্তরা তাদেরকেও বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীত দেখায়। গড়েয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল আব্দুর রউফ’র উপস্থিতিতে ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে জোর করে জোতিষ তার বাবা ও দুই ভাইয়ের স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়। তবে মারধরের বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে বা থানায় মামলা করতে গেলে ফাঁকা স্ট্যাম্প ব্যবহার করে চাঁদাবাজির মামলার হুমকি দেয় বিনয় গ্যাং। জোতিষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতেই ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান তার পরিবারের লোকজন। পরে সুস্থ্য হয়ে জোতিষের ভাই জগেন বর্মণ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

জোতিষের বাবা ধীরেন বর্মণ বলেন, আমার ছেলে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে, সে চোর নয়। কি অপরাধে আমার ছেলেকে লোহার রড দিয়ে মারলো? বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় সে রাস্তায় হাটাহাটি করছিলো এটাই কি তার দোষ?। ৫/৬ জন মিলে আমার ছেলেটাকে মারপিট করলো। আমার কাছে ফাঁকা স্টাম্পে সই নিয়ে বলে বেশি বাড়াবাড়ি করলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসায় দিবো। ছেলেটা এখনো সোজা হয়ে দাড়ায় থাকতে পারে না। আমরা গরিব বলে কি কোন বিচার পাবো না? প্রশাসনের কাছে অনুরোধ সই করা ফাঁকা স্ট্যাম্পে গুলো আমাকে উদ্ধার করে দেয়। আর আমার ছেলেকে যারা অমানুষের মতো মারছে তাদের বিচার উপরওয়ালায় করবে।

এব্যাপারে অভিযুক্তদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তাদের কারো সাথে কথা বলা সম্ভাব হয়নি।

এবিষয়ে ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, আমি ঘটনাস্থানে গিয়ে জানতে পারি জোতিষ বর্মণকে চোর সন্দেহ আটক করে স্থানীয় কিছু যুবক। পরে ৩০০টাকা মূল্যের ফাঁকা স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এব্যাপারে গড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রইছ উদ্দিন সাজুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, শুনেছি জোতিষ বর্মণ নামে এক ব্যক্তি মারধর করা হয়েছে। তবে ফাঁকা স্টাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না।

এবিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: কামা হোসেন জানান, চোর সন্দেহে জোতিষ বর্মণকে মারধরের বিষয়টি এখন জানলাম। ভুক্তোভোগী বা তার পরিবারের কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেননি। যেহেতু তারা আদালতে মামলা করেছে। আদালতের নির্দেশনা পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।