

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমত অসীম, যার তুলনা পৃথিবীর কোনো কিছুর সঙ্গে করা সম্ভব নয়। তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি এতটাই দয়ালু যে, মানুষ যতবারই ভুল করুক না কেন, যদি সে আন্তরিকভাবে ফিরে আসে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।
পৃথিবীর জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত এবং ক্ষণস্থায়ী। আমাদের প্রত্যেকের চূড়ান্ত গন্তব্য আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া। কিন্তু সেই ফিরে যাওয়া হবে কীভাবে? আমরা কি আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় পাব, নাকি আমাদের গাফলতির কারণে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে?
এই প্রশ্ন আমাদের প্রতিনিয়ত মনে জাগ্রত হওয়া উচিত। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
قُلْ يَا عِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُواْ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ.
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর সীমা লঙ্ঘন করেছ! তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা জুমার: ৫৩)
এই আয়াত আমাদের জন্য এক বিশাল সুসংবাদ।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর রহমতের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন, আমাদের জীবন পরিচালনা করছেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। এই সত্যকে কুরআন ও হাদিসে বারবার স্মরণ করানো হয়েছে।
আসুন, আমরা এই বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের আলোকে কিছু আলোচনা করি।
আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমতের মাধ্যমেই আমাদেরকে অস্তিত্ব দান করেছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ
“আর আমার রহমত সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে।” (সূরা আরাফ: ১৫৬)
এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আল্লাহর রহমত অসীম। আমাদের প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস, আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই রহমত পেতে হলে আমাদেরকে তাঁর নির্দেশনা মেনে চলতে হবে এবং তাঁর নাফরমানি থেকে দূরে থাকতে হবে।
নফস বা আত্মা মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। নফস সর্বদা মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে চায়। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي
“নিশ্চয় নফস মন্দেরই আদেশ দেয়, তবে আমার রব যার প্রতি রহমত করেন।” (সূরা ইউসুফ: ৫৩)
এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, নফস মানুষের অন্তরে মন্দের প্ররোচনা দেয়। কিন্তু আল্লাহর রহমত যার উপর বর্ষিত হয়, সে নফসের ধোঁকা থেকে মুক্ত থাকে। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে সর্বদা নফসের ধোঁকা থেকে মুক্তি চাওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
حُفَّتِ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِ وَحُفَّتِ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ.
“জান্নাত কষ্টের মধ্যে আবৃত, আর জাহান্নাম কামনা-বাসনার মধ্যে আবৃত।” (সহিহ মুসলিম,২৮২২)
এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, নফসের কামনা-বাসনা মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। তাই আমাদেরকে নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে এবং আল্লাহর রহমতের আশ্রয় নিতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
“নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই ফিরে যাব।” (সূরা আল-বাকারা: ১৫৬)
এই আয়াত আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমাদের জীবনের শেষ গন্তব্য আল্লাহর দিকেই। তাই আমাদের উচিত এই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে ব্যয় করা।
পরকালীন জীবন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
اكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ
“সুখ-ভোগকে ধ্বংসকারী (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ কর।” (সুনান আত-তিরমিজি, ২৩০৭)
এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, মৃত্যু ও পরকালীন জীবনের স্মরণ আমাদেরকে দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত রাখে এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
পরিশেষে বলবো, আমরা যদি ভুল করে থাকি, যদি গুনাহের গভীরে ডুবে গিয়েও থাকি, তবুও আল্লাহর রহমত আমাদের জন্য উন্মুক্ত। আমাদের করণীয় হলো, আন্তরিক তওবা করা, আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, এবং তাঁর দেওয়া হেদায়েতের পথে চলা।
আল্লাহর রহমত ও আমাদের প্রত্যাবর্তন—এই বিষয়টি আমাদের জীবনের মৌলিক সত্য। আমাদেরকে আল্লাহর রহমতের আশা রাখতে হবে এবং নফসের ধোঁকা থেকে মুক্ত থাকার জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।
আমাদের জীবনের শেষ গন্তব্য আল্লাহর দিকেই, তাই আমাদের উচিত এই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে ব্যয় করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে নফসের ধোঁকা থেকে হেফাজত করুন এবং তাঁর রহমতের ছায়ায় আমাদের জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন
লেখক
কবি মোঃ মোবারক হোসাইন
ইনচার্জ, সোনাইমুড়ী তামিরুল উম্মাহ মাদরাসা (বালক শাখা)
দুঃশ্চিমপাড়া, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী।