

ইবি প্রতিনিধি:মানিক হোসেন
শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহ’র রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস।
এসময় তারা ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা ও আলো নিশ্চিত, প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবি জানান।
শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভের উদ্দেশ্যে জড়ো হতে শুরু করে। সেখানে দলে দলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এসময় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। পরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে দুপাশেই আটকে দেন। এতে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর সহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারা সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
এসময় শিক্ষার্থীরা
‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’,
‘প্রশাসনের টালবাহানা, চলবে না চলবে না’,
‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’,
‘বাজেট নাই বাজেট নাই, বাজেট কী তোর বাপে খায়’,
সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাছাড়াও তাদের হাতে বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আমরা লাশ দেখে প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। আমাদের জানানোর প্রায় পৌঁনে এক ঘণ্টা পর সেই লাশ উদ্ধার করা হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে থানা হওয়ার পরেও পুলিশ আসতে এতো সময় লাগলো কেন?
এছাড়া লাশ উঠানোর প্রায় আধা ঘণ্টা পার হলেও সেখানে কোন ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। পরে আমরা বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই। পরে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তারা আরোও অভিযোগ করেন, লাশ সনাক্তের দুই ঘণ্টার মধ্যেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্টের দেখা মেলেনি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোতে কোন সিসি ক্যামেরা সচল নেই। এখন আমরা দেখতেও পাচ্ছি না, সে কখন কোথায় গিয়েছে। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিরাপত্তার ঘাটতি মোটেও কাম্য নয়। আমরা প্রশাসনকে বার বার বলার পরেও তারা বাজেট ঘাটতির কথা বলে সিসি ক্যামেরা লাগাচ্ছে না। তাদের যদি এতই ঘাটতি থাকে তাহলে আমাদের বলুক আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে সিসি ক্যামেরা লাগাবো।
এসময় শিক্ষার্থীরা সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা, পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা, ক্যাম্পাসের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা,
ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও সক্রিয় রাখা ও বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশ নিয়েছেন।
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রশাসন ভবন থেকে শিক্ষার্থীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে যান। সেখানে সাজিদ আবদুল্লাহ’র গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ্য, রেজিস্ট্রার সহ অন্য শিক্ষক-কর্মকর্তারা অংশ নিতে চাইলে তাদের অপেক্ষা না করেই শিক্ষার্থীরা জানাজা সম্পন্ন করেন। জানাজা শেষে আবারো বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হয় তারা। এদিকে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন না করা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করে শাখা ছাত্রদল। তারাও কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। এদিকে গতকাল শুক্রবার রাতে একই দাবিতে টর্চলাইট মিছিল করেছে শাখা ছাত্রশিবির। তাছাড়াও রাতেই ইবির ছাত্রীহলগুলোতে অবস্থানকারী ছাত্রীরা রাতেই হলের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করেছেন। বিবৃতির মাধ্যমে বিচার দাবি করেছেন বিভিন্ন শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনগুলোও। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষয়টি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এদিকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য (উপ-উপাচার্য) অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি করেছি। আমরা সবাই মিলে বসেছি। তদন্ত কীভাবে দ্রুত করা যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। শিক্ষার্থীরা ব্যথিত ও শোকাহত হয়ে যে কোনো ভাষায় কথা বলতে পারে। এটা তাদের অধিকার। তবে আমরা তাদের সাথেই আছি। তাদের জন্যই কাজ করছি।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৬ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং রুমে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়।
মানিক হোসেন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি