• আজ ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
 এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না | শাহবাগীদের সতর্ক করে হাসনাত আবদুল্লাহ’র পোস্ট | হাবিবুল্লাহ বাহারের  উপাধ্যক্ষকে কুপিয়ে হত্যা, ফরিদপুর থেকে দম্পতি গ্রেফতার  | গণজাগরণের লাকির গ্রেপ্তারের দাবিতে মধ্যরাতে উত্তাল ঢাবি | হত্যাকান্ড ধামাচাঁপা দিতে ওসির ‘জজ মিয়া’ নাটক | নারী নিপীড়ন ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি | শেখ হাসিনা-রেহানা পরিবারের জমি-ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ | মাগুরায় শিশু ধর্ষণ : গভীর রাতে শুনানি, ৪ আসামি রিমান্ডে | গাড়ি চাপায় পোশাক শ্রমিক নিহত বনানী – মহাখালী রাস্তা অবরোধ | আশুলিয়া ককটেল ফাটিয়ে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি |

অভাবের তাড়নায় ভাতের মাড় খেয়ে দিন কাটে ৬বছরের শিশু আঁখিসহ তার পরিবার

| নিউজ রুম এডিটর ৪:০৬ অপরাহ্ণ | জানুয়ারি ২৫, ২০২৫ পিপলস মানবিক

 

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ‘চাই না মাগো রাজা হতে, রাজা হবার সাধ নাই, মাগো দু’বেলা যেন পাই মা খেতে’- কথাগুলো ছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও সাধক রামপ্রসাদ সেনের। এটিই বাঙালির হাজার বছরের চিরন্তন স্বপ্ন। তবে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অভাবের তাড়নায় ভাতের অভাবে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকা, সন্তানকে অন্যের বাসা থেকে ভাতের মাড় নিয়ে খাওয়ানোর গল্প কিছুটা অবাস্তব কিংবা অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই বাস্তব। এ সময়ে এসেও একমুঠো ভাতের অভাবে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে ৬ বছরের শিশুসন্তান আফসানা খাতুন আঁখির মুখে ভাতের মাড় তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে শিশুটির মা। আফসানার বাসা আশাশুনি উপজেলার বাঁকড়া ব্রিজ এলাকায়। সে ওই এলাকার আলমগীর হোসেন ও রুবিনা খাতুন দম্পত্তির একমাত্র সন্তান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত এক দশক আগেও ভাতের অভাব ছিল না শিশুটির পরিবারে। বসবাস করত মরিচ্চাপ নদীর তীরে। তবে অপরিকল্পিত নদী খননের ফলে নদীতে বিলীন হয়ে যায় আলমগীর হোসেনের বসতভিটা। এরপর যাযাবরের মতো দেশের বিভিন্ন ইটভাটা ও রাইচ মিলে পরিবারসহ কাজ করে সংসারের ভরণপোষণ জোগাতেন তিনি। তবে শারীরিক অক্ষমতার কারণে মালিকপক্ষের মনমতো কাজ করতে না পারায় সেখান থেকেও বিতারিত হতে হয় আলমগীরকে। একপর্যায়ে উপায়ান্তর না পেয়ে বাঁকড়া ব্রিজের বেড়িবাঁধের স্লোপে (পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা) বেড়া আর নারকেলগাছের পাতার ছাউনি দিয়ে বসবাস করতে থাকেন আলমগীর ও রুবিনা দম্পতি। এসবের ভেতরেই জন্ম হয় শিশু আফসানা খাতুন আঁখির।

আঁখির বয়স যত বাড়তে থাকে, তত সাংসারিক খরচও বাড়তে থাকে আলমগীরের সংসারে। তবে শারীরিকভাবে ভারী কাজ করতে অক্ষম হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় বেকার থাকতে হয় আলমগীরকে। অপরদিকে রুবিনা কাজ করলেও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হন। তার ওপর প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়াতে সব সময় কাজ না পাওয়ায় এই দুরবস্থা হয় তাদের সংসারে।

সরেজমিনে আঁখিদের এলাকাতে গেলে জানা যায়, বর্তমানে ওই এলাকার বিদ্যুৎহীন পরিবার তারা। বছরের অধিকাংশ সময় কোনো না কোনো বেলা অনাহারে থাকতে হয় তাদের। এনজিওর সহায়তায় আঁখির বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও সেটার আলো হিসেব করে ব্যবহার করতে হয়। যদি আকাশ দীর্ঘদিন মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তাহলে অন্ধকারে থাকতে হয় রাতের সময়। আর রাতের মতোই অন্ধকার নেমে এসেছে তাদের জীবনে।

শিশু আঁখির বাসাতে গিয়ে দেখা, পার্শ্ববর্তী একটা বাড়ি থেকে মেয়ে আঁখির জন্য ভাতের মাড় সংগ্রহ করে রেখেছেন তার মা রুবিনা খাতুন। দুপুরের পর যখন আঁখি ৩ কিলোমিটার দূরের স্কুলের ক্লাস শেষ করে ফিরবে, তখন এই ভাতের মাড় খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করবে শিশুটি। এ সময় শিশুটির খাবারের তালিকাতে ছিল টমেটো সেদ্ধ ও দেশি ভাজা পুঁটি মাছ। সবজির দাম কমে যাওয়াতে এই টমেটো কেনেন আঁখির বাবা। মাছগুলো ছিল প্রতিবেশী এক ঘের মালিকের দেওয়া।

আঁখির মা রুবিনা খাতুনের ভাষায়, ‘নসিবে যদি কষ্ট লেখা থাকে তাহলে সুখবা আসবে কোথা থেকে! স্বামী অসুস্থ, ভারী কাজ করতে পারে না। এক দিন কাজ বয়লে (চললে) দুই দিন কাজ হয় না। আর আমি তো নারী। আমারে সবাই কাজেও নেয় না। যারা নেয়, তারাও কম মজুরি দেয়।’

আবেগপ্রবণ হয়ে রুবিনা বলেন, ‘মেয়েটারে নতুন জামাকাপড় দিতে পারি না। লোকের ফেলে দেওয়া জামাকাপড় বছরের পর বছর পরে আসছে। বর্তমানে ফুল ড্রেসের পরিবর্তে হাফপ্যান্ট পরে ক্লাস করতে যাওয়ায় শিক্ষকরা আপত্তি তুলেছে। যেখানে একমুঠো ভাত জোগাড় করতে পারি না, সেখানে ফুল প্যান্ট কেনা সাধ্যের বাইরে।’

আঁখির বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গত সরকার ভূমিহীনদের ঘর দিয়েছিল। তবে আমাদের ভাগ্যে কোনো ঘর জোটেনি। আবেদন করেছিলাম। সরাসরি সে সময়ের ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। কোনো সুফল মেলেনি।’