• আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশিদের চাহিদা বাড়ায় কলকাতার অভিনেত্রীদের ক্ষোভ

| নিউজ রুম এডিটর ৭:১৪ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১ চলচ্চিত্র, বিনোদন

কলকাতার গুণী পরিচালক ও অভিনেতা অরিন্দম শীলের হাত ধরে ২০১৩ সালে কলকাতার সিনেমায় অভিষিক্ত হন বাংলাদেশের জয়া আহসান। ছবির নাম ‘আবর্ত’। প্রথম ছবি দিয়েই বাজিমাত করেন। এরপর একে একে জয়া ওপার বাংলার দর্শক মুগ্ধ করেছেন ‘বিজয়া’, ‘বিসর্জন’, ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’, ‘রাজকাহিনি’, ‘ভালোবাসার শহর’, ‘ঈগলের চোখ’, ‘কণ্ঠ’, ‘‘বিনিসুতোয়’ ইত্যাদি সিনেমা দিয়ে।

এখনো তিনি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন টালিগঞ্জে। তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা সেখানে আকাশ ছোঁয়া। বলা চলে কলকাতার উল্লেখযোগ্য প্রায় সব পরিচালক ও প্রযোজকদের প্রথম পছন্দ জয়া। তার চাহিদার প্রভাবে ম্লান খোদ কলকাতারই অনেক অভিনেত্রী। যে তালিকায় আছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, স্বস্তিকা মুখার্জি, পাওলি দাম, রাইমা সেনের মতো গুণী অভিনেত্রীরা।

দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অবশেষে এ নিয়ে বিশেষ লেখাও প্রকাশ করলো কলকাতার জনপ্রিয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার।

পত্রিকাটির দাবি, জয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের মিথিলা ও বাঁধনেরও চাহিদা বেড়েছে ওপার বাংলার সিনেমা-সিরিজে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে না বললেও টলিউডের অনেক অভিনেত্রীর চাপা ক্ষোভ রয়েছে।

জয়া আহসান প্রথম বাংলাদেশি অভিনেত্রী যিনি টলিউডে পরপর কাজ করছেন অনেক বছর ধরেই। তারপর রাজকীয় একটা অভিষেক পান সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ওয়েব সিরিজ় ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’তে আজমেরী হক বাঁধন। তার কাজও প্রশংসিত হয়েছে। তাকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন কলকাতার অনেক পরিচালকই।

এদিকে রাজর্ষি দে পরিচালিত ‘মায়া’, রিঙ্গোর ছবি ‘আ রিভার ইন হেভন’এ রয়েছেন এপার বাংলার আরেক অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। সৃজিত মুখার্জির স্ত্রী হিসেবে তো একটা প্রভাব রয়েছেই, বাংলাদেশের একজন চাহিদাসম্পন্ন অভিনেত্রী হিসেবেও মিথিলার গুরুত্ব বাড়ছে ওপারে।

এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের প্রতি কলকাতার এই আগ্রহের মূলে কিন্তু দর্শক। মূলত কলকাতার পরিচালকদের কাজগুলোর প্রতি খুবই আগ্রহী ঢাকার দর্শকেরা। তা সে সিনেমা হলের জন্যই হোক বা হইচই, জি ফাইভ হোক। এসব দর্শক ধরতেই সেখানকার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও নির্মাতারা বাংলাদেশের অভিনেত্রীদের প্রাধান্য দিচ্ছেন।

জয়া-মিথিলা-বাঁধনরা টালিউডের যে ঘরনার সিনেমাতে কাজ করছেন, এই ঘরানার সিনেমায় এর আগে সাধারণত পাওলি দাম, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, রাইমা সেনদের দেখা যেত।

অন্যদিকে টালিউডের মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমার চাহিদা কমে যাওয়ায় শুভশ্রী, শ্রাবন্তী, মিমি চক্রবর্তী, নুসরাতও ঝুঁকেছেন ভিন্ন ধারার সিনেমার দিকে। ফলে অল্প পরিসরে প্রতিযোগিতা বেশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নায়িকা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এমন অনেক চরিত্রই বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের দেয়া হয়, যেটা এখানকার যে কেউ করতে পারত।’

জয়া আহসান অবশ্য এই প্রতিযোগিতা নিয়ে ভাবতে চান না। তার মতে, কাজের সুযোগ সবারই আছে। আনন্দ প্লাসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা তো ভালোই। আমার মতে শিল্পের কোনো সীমারেখা থাকা উচিত নয়।’

এদিকে দুই বাংলার শিল্পের আদান-প্রদানের ওপরে জোর দিলেন মিথিলা।

মিথিলা বলেন, ‘কেউ কারও কাজ, জায়গা কেড়ে নিতে পারে বলে মনে হয় না। সবাই নিজের যোগ্যতা দিয়ে কাজ পাচ্ছেন। আমি বৈবাহিক সূত্রে কলকাতায় থাকছি, তাই এখানেই কাজ করছি এখন। তবে আমি এখানে সদ্য কাজ শুরু করেছি। আমাকে বোধহয় কারও প্রতিযোগী হিসেবে দেখাটা ঠিক হবে না।’

সেই সঙ্গে মিথিলা মনে করিয়ে দিলেন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকেই বাংলাদেশে কাজ করেছেন।

বাংলাদেশের সিনেমা কমান্ডোতে কাজ করেছেন দেব। আবার কলকাতায় গিয়ে একাধিক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়া।

বাংলাদেশে কাজ করেছেন টালিউডের এমন এক নায়িকা বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশের শিল্পীরা যত সুযোগ পান, সেই তুলনায় বাংলাদেশে আমাদের কাজের সুযোগ বেশ কম।’

এসব নিয়ে বাঁধন মনে করেন, এই চর্চাগুলো অভিনেত্রীদের ওপরে বাড়তি চাপ তৈরি করে।

তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ থেকে অভিনেত্রীরা এসে কাজ করায় টালিউডের কিছু অভিনেত্রীর মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আসলে আমাদের সমাজ এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে দেয়। বিশেষ করে নারীদের ওপরেই বেশি চাপ তৈরি করা হয়। কেন এই চাপগুলো আমাদের নিতে হবে?

‘এগুলো এড়িয়ে ভালো দিকগুলো ভাবলে, সবারই ভালো হবে। সবাই যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবেন। কথাটা কলকাতা-বাংলাদেশ সব ইন্ডাস্ট্রির নিরিখেই বলছি।’

পিএন/জেটএস