

দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত
মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সিনহাকে অর্থ পাচারের ধারায় সাত বছর এবং অর্থ আত্মসাতের ধারায় চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুটি ধারায় দেওয়া সাজা একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে এসকে সিনহাকে সাত বছরের সাজা ভোগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে চার কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাতের এ মামলায় ১১ আসামির মধ্যে রায়ে এসকে সিনহা ছাড়া অপর আট আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং দুই আসামি খালাস পেয়েছেন। বিচার শুরুর এক বছর দুই মাস ২৬ দিন পর চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির রায় ঘোষণা করা হলো। আর এ রায়ের মাধ্যমেই বাংলাদেশের প্রথম সাবেক কোনো প্রধান বিচারপতি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন। এদিকে এ রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী ‘বিচার বিভাগের জন্য এটা কোনো সুখকর দিন নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে ঐতিহাসিক এ রায়ের ফলে দুদকের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিন বেলা ১১টা ৩ মিনিটে বিচারক রায় পাঠ শুরু করেন। ১৮২ পৃষ্ঠার এই রায়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা বিচারক ইংরেজিতে পাঠ করে শোনান। দুপুরে ১টা ১৭ মিনিটের দিকে রায় পাঠ শেষ করেন তিনি। রায়ে বিচারক সাক্ষী থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় পাঠ করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের ক্রেডিট পলিসি লঙ্ঘন করে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতির জন্য ঋণ অনুমোদন করা হয়েছিল। সেই অর্থ যে পাচার হয়েছিল, সে বিষয়টিও মামলায় প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমি বলব, বিচার বিভাগের জন্য এটা কোনো সুখকর দিন নয়। কিন্তু এটাও সঠিক, অন্যায় করলে তার বিচার হবে। এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আলোচিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুদকের এই মামলা। এই মামলায় দুদক যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে, এটি একটিই বার্তা দেয়-তা হলো কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। এই রায়টি উচ্চ আদালতে কতটুকু প্রতিফলিত হয়, তা-ই দেখার বিষয়। দুদক যেন এমন ব্যক্তিপরিচয় ও অবস্থানের ঊর্ধ্বে থেকে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে-এ রায়ের ফলে সেই প্রত্যাশা আরও বাড়বে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এসকে সিনহাকে প্রধান বিচারপতি বানিয়েছে বর্তমান সরকার। তাকে প্রধান বিচারপতি বানানোর আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল উনি কী ধরনের মানুষ। তিনি বলেন, সরকারই এসকে সিনহাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে, মামলা দিয়েছে। প্রতিহিংসার চূড়ান্ত পরিণতি হলো এই রায়।
এই রায়ে একটি বার্তা দিতে চায় সরকার-এমন মন্তব্য করে খোকন বলেন, কথা না শুনলে প্রয়োজনে তারা (সরকার) আপন লোককেও বলি দিতে পারে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। সরকারের কাছাকাছি যারা আছেন, বিশেষ করে যারা তাঁবেদারি করেন, তাদেরকে একটা ইঙ্গিত দিতে চায় সরকার। প্রয়োজন শেষ হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ব্যবস্থা করা হবে। এসকে সিনহার পরিণতি ভোগ করতে হবে।
মামলার আরজির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার (এসকে সিনহার) টাকা সে খেয়ে ফেলেছে, না নদীতে ফেলে দিয়েছে, এতে কার আসে যায়। এটা মানি লন্ডারিং (অর্থ পাচার) কীভাবে হয়-প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আসামিদের যত সাজা : সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার দুই ধারায় ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অর্থ পাচারের ধারায় এসকে সিনহাকে সাত বছর কারাদণ্ড, ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর অর্থ আত্মসাতের ধারায় এসকে সিনহার চার বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রায়ে তার অ্যাকাউন্টে ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) থাকা ৭৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের আদেশও দেওয়া হয়েছে।
ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি একেএম শামীমকে চার বছর কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়কে তিন বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন ও ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারীকে তিন বছর করে কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে মাহবুবুল হক চিশতী কারাগারে ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক রয়েছেন। অপর ছয় আসামি জামিনে ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় তারা আদালতে হাজির হন। তাদের মধ্যে শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা খালাস পেয়েছেন। বাকি চারজনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া এসকে সিনহাসহ পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
দুদক ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া : রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দুদকের আইনজীবী মীর আহাম্মেদ আলী সালাম বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। অপরাধী যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, যত বড় ক্ষমতা থাকুক না কেন, আইনের আওতায় তাকে আসতেই হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে সাজা ভোগ করতেই হবে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির পদে থাকা অবস্থায় ওনার (এসকে সিনহা) যে অবস্থান, সেই অবস্থানে থেকে উনি যেটা করেছেন, সেটা প্রসিকিউশন থেকে সফলভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি বলেই তার সাজা হয়েছে।
দুই আসামি শাহজাহান এবং নিরঞ্জন সাহার খালাস পাওয়ার বিষয়ে মীর আহাম্মেদ আলী সালাম বলেন, তাদের ভিকটিমাইজড করা হয়েছে। এ মামলায় তারা আদালতে এসে স্বীকার করেছেন, তারা মামলা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তাদের কিছু কাগজে স্বাক্ষর করতে হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস দিয়েছেন। এসকে সিনহার সাজা বিষয়ে তিনি বলেন, আদালত সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে পৃথক দুই ধারায় ১১ বছর সাজা দিয়েছেন। একাধিক ধারায় সাজা হলে যে ধারায় সর্বোচ্চ সাজা, সেই সাজাই ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ তাকে সাত বছর কারাভোগ করতে হবে। অপরদিকে আসামি বাবুল চিশতী ও লুৎফুল হকের আইনজীবী মো. শাহীনুর ইসলাম জানান, এ রায়ে তার মক্কেলরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
মামলার অভিযোগে যা আছে : বিচারপতি এসকে সিনহা তিন বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমানোর পর দুদক অভিযোগ পায়-তিনি ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে দুই ব্যক্তির নেওয়া ঋণের চার কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছিলেন। এরপর তদন্তে নামে দুদক। দীর্ঘ তদন্তের পর ২০১৯ সালের ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরদিন তারা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। যার মালিক ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। ঋণের জামানত হিসাবে আসামি রণজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে। মামলার এজাহারে ওই দম্পতি এসকে সিনহার পূর্বপরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি একেএম শামীম কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই ব্যাংকের নিয়মনীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন করেন। ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এসকে সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিমকোর্ট শাখায় এসকে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে এসকে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে ২ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।
এহাজারে আরও বলা হয়, আসামি রণজিৎ চন্দ্র ঋণ দ্রুত অনুমোদনের জন্য প্রধান বিচারপতির প্রভাব ব্যবহার করেন। রণজিৎ চন্দ্রের ভাতিজা হলেন ঋণগ্রহীতা নিরঞ্জন এবং অপর ঋণগ্রহীতা শাহজাহান ও রণজিৎ ছোটবেলার বন্ধু। ঋণগ্রহীতা দুইজনই অত্যন্ত গরিব। তারা কখনো ব্যবসা-বাণিজ্য করেননি।
মামলার তদন্ত ও বিচার : পাঁচ মাসের তদন্ত শেষে দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ১১ জনকে আসামি করে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে দাখিল করেন। চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, উত্তোলন ও পাচার করেছেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুদকের করা এই মামলার এজাহারে বাবুল চিশতীর নাম না থাকলেও চার্জশিটে তাকে নতুন করে আসামি করা হয়। আর এজাহারে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদকে আসামি করা হলেও অভিযোগপত্রে মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। দুদকের দেওয়া চার্জশিট আমলে নিয়ে ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালত ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে এসকে সিনহার বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং মামাতো ভাইয়ের ছেলে শঙ্খজিৎ সিনহাও রয়েছেন। তারা দুজনেই বলেন, এসকে সিনহার কথাতেই তাদের নামে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায় হিসাব খোলা হয়েছে। পরে সেই হিসাবে সোয়া দুই কোটি টাকা স্থানান্তরের বিষয়ে তারা জানতেন না। ২৪ আগস্ট এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ (দুদক) ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৫ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়। ওইদিন বিচারক অসুস্থ হয়ে ছুটিতে থাকায় এ রায় ঘোষণা হয়নি। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২১ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু ওইদিনও রায় প্রস্তুত না হওয়ায় তা ঘোষণা করা হয়নি। এরপর রায় ঘোষণার জন্য তৃতীয় দফায় এই দিন (৯ নভেম্বর) ধার্য করা হয়।
পলাতক এসকে সিনহা যেখানে আছেন : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসা বিচারপতি সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে বসেই ২০১৮ সালে একটি বই প্রকাশ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন এসকে সিনহা। নিউ জার্সিতে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে কেনা বাড়িতেই সে সময় থেকেছেন তিনি। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে এসকে সিনহা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় গিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বলে খবর প্রকাশ হয়। বিচারপতি এসকে সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসাবে শপথ নেন এসকে সিনহা। বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র অমুসলিম ও আদিবাসী বিচারক, যিনি বিচারাঙ্গনের শীর্ষ পদে পৌঁছেছিলেন। প্রধান বিচারপতি হওয়ার আগে থেকেই নানা কারণে আলোচিত এসকে সিনহা তার ১০৩০ দিনের দায়িত্বে বারবার সংবাদ শিরোনামে এসেছেন নানা ঘটনায়। বয়স অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নজিরবিহীন এক পরিস্থিতির মধ্যে তার কার্যকাল শেষ হয় মেয়াদের ৮১ দিন আগেই।
অবসরের পর রায় লেখা নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সহকর্মীর সঙ্গে বাদানুবাদ, বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ আনা, অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট প্রকাশ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধ, সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে উত্তেজনা-এরকম বহু ঘটনায় বিচারপতি সিনহা বহুবার সংবাদ শিরোনামে এসেছেন।