• আজ ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আজ বিশ্ব ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা দিবস

| নিউজ রুম এডিটর ৬:০১ অপরাহ্ণ | জানুয়ারি ২৮, ২০২২ আন্তর্জাতিক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের সাথে সাথে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য হুমকির মুখে পড়েছে। রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকদের কেউ আর নিরাপদ নেই। কথায় কথায় কল রেকর্ড বা ভিডিও রেকর্ড, ব্যক্তিগত ফোন আলাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যত্রতত্রভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।

আজ (২৮ জানুয়ারি) বিশ্ব ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা দিবস। দিবসটিকে কেন্দ্র করে গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষাকারী সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকালে এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত করে। কর্মসূচি চলাকালে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য জনসচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, চুল কাটার বা চুলে কলপ দেয়া থেকে শুরু করে হাজার হাজার ই-কমার্স এর নামে গ্রাহকের ব্যক্তিগত নাম্বারে বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদেরকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা ও ভীতির কারণ হয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল বিন্যাস এখন আর নিরাপদ নেই। ডাটা প্রাইভেসি দিবসের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তথ্য সুরক্ষা ও আস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সংবিধানের ৪৩ (খ) অনুচ্ছেদে প্রাভেসি রাইটস বা ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা কে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার ৫০বছরেও বাংলাদেশ ডাটা প্রাইভেসি আইন প্রণয়ন করা হয়নি। দেশে বর্তমানে সক্রিয় সিমের পরিমাণ প্রায় ১৮ কোটি, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক ফাইভ জি চালু করা হয়েছে, এম এফ এসে লেনদেনকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি, অনলাইন ব্যাংকিং সেবার সাথে যুক্ত সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। আজকাল জন্ম নিবন্ধন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি সকল সেবা নিতে হয় অনলাইনে। আরও সকল সেবা নেওয়ার সময় নাগরিকদের আঙ্গুলের ছাপ, এনআইডি নাম্বার, জমির দলিলের কপি, বিদ্যুৎ বিলের কপি, সহ অন্যান্য প্রায় ১৮ প্রকার তথ্য প্রদান করতে হয়। সিম নিবন্ধনে লাগে আঙ্গুলের ছাপ। সকল সেবা গুলিকে এনআইডি নাম্বার বা মুঠোফোন নাম্বার দ্বারা সমাধান বা একই ছায়া তলে না আনার কারণেই যত্রতত্র তথ্য প্রদান করায় বিপত্তি ও নাগরিক তথ্য বা ব্যক্তিগত তথ্য হুমকির সম্মুখীন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এর ২৬ ধারায় অনুমতি ছাড়া কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ কে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংবিধানের নির্দেশনা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অনুযায়ী (অনুচ্ছেদ-১২) নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে আন্তর্জাতিক সনদ (অনুচ্ছেদ-১৭) জাতিসংঘের কনভেনশন অনুযায়ী (অনুচ্ছেদ-১৪) এবং শিশু অধিকার সনদ (অনুচ্ছেদ-১৬) এ প্রাইভেসিকে অধিকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১এর৭১ ধারায় টেলিফোনে আড়িপাতার দণ্ডে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি অপর দুজন ব্যক্তির টেলিফোন আলাপে ইচ্ছাকৃতভাবে আঁড়ি পাতে, তাহলে প্রথমত ব্যক্তির এই কাজ হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি অনধিক দুইবছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তবে শর্ত থাকে যে, ধারা ৯৭ (ক-এর অধীন সরকার থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা বা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থার কোনো কর্মকর্তার ক্ষেত্রে এই ধারার বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে না।এমন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকা সত্ত্বেও ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখা যাচ্ছে না। যার ফলে গ্রাহকের ব্যাংক একাউন্ট এর অর্থ, মোবাইল ব্যাংকিং এর অর্থ, এমনকি ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে ব্ল্যাকমেইলের শিকার করে সর্বশান্ত করা হচ্ছে নাগরিকদের। আবার যত্রতত্র গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে ভাইরাল এর মাধ্যমে মানহানির ঘটানোসহ সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে যা সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
এসময় সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি তোলা হয়।
০১। ব্যক্তিগত ডাটা সুরক্ষা আইন ২০২২ নামে চলতি অধিবেশনেই পাস করতে হবে।

০২। সরকারি বা বেসরকারী সকল সেবার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র এনআইডি নাম্বার বা ফোন নাম্বার দিয়ে সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

০৩। গ্রাহকের ব্যক্তিগত ফোন আলাপ বা অডিও-ভিডিও প্রকাশকারীদের শনাক্ত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

০৪। ফিঙ্গারপ্রিন্ট কেবলমাত্র জাতীয় পরিচয় পত্রের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যাবে না।

মানববন্ধন কর্মসূচি ও জনসচেতনতা মূলক লিফলেট বিতরণ উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক, বাংলাদেশ ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, জাতীয় নারী আন্দোলনের সভাপতি নেত্রী মিতা হক, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, এনডিএম এর সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন নুরুজ্জামান হীরা, মোবাইলে রিচার্জ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু, সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক জামিল, কেন্দ্রীয় সদস্য শাহজাহান শেখ ফরিদ প্রমূখ, উপস্থিত নেতৃবৃন্দ নাগরিক স্বার্থে তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। আপনার সময় কাটছে কিভাবে? লিখতে পারেন পিপলস নিউজ‘এ । আজই পাঠিয়ে দিন feature.peoples@gmail.com মেইলে