ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও দুই বছর ধরে পিকআপ, চান্দের গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন সহিদুল ইসলাম। দুর্ঘটনার সময় ঘন কুয়াশার মধ্যে বেপরোয়া গতিতে পিকআপ চালাচ্ছিলেন তিনি। পরে মালিকের নির্দেশনায় আত্মগোপনে চলে যান।
এদিকে গত ৪ বছর ধরে ওই পিকআপের ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন নেই। আর গত তিন বছর ধরে রুটপারমিট মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় বাবার শ্রাদ্ধ শেষে ফেরার পথে বেপরোয়া গতির পিকআপের চাপায় পাঁচ ভাই মৃত্যুর ঘটনায় পিকআপচালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি বান্দরবান। তিনি লামার আলী জাফরের ছেলে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল গাড়িচাপা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ঘটনার সময় তারেক ও রবিউল নামের দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে চকরিয়া থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে সবজিবোঝাই পিকআপ নিয়ে রওনা করেন তিনি। তারেক পিকআপের মালিক মাহমুদুল করিমের ছেলে ও রবিউল তার ভাগিনা। কুয়াশার মধ্যেও দ্রুত সবজি ডেলিভারির উদ্দেশ্যে ৬৫-৭০ কিলোমিটার গতিতে পিকআপ চালাচ্ছিলেন সাইফুল।
৫ ভাইকে চাপা দিয়ে হত্যা: চালকের নেই লাইসেন্স, পিকআপের ফিটনেস
তিনি বলেন, ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ৯ ভাই-বোনকে দেখতে না পেরে তাদের চাপা দেন সাইফুল। এরপর তিনি পিকআপ থেকে নেমে নিহতদের দেখতে এলেও মালিকের ছেলে তারেকের নির্দেশে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে চালক সাইফুল পিকআপ মালিককে ফোন করে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান। মালিক তাকে পিকআপটি কোনো এক স্টপেজে রেখে লোকাল বাসে করে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী সাইফুল ডুলাহাজরায় পিকআপটি রেখে বাসে করে চকরিয়ায় গিয়ে মালিকের সঙ্গে দেখা করেন।
তিনি আরও বলেন, এ সময় পিকআপের মালিক মাহমুদুল তাকে অন্তত এক বছর আত্মগোপনে থাকার পরামর্শ দিলে তিনি প্রথমে বান্দরবানের লামার রাবার বাগানে আত্মগোপনে যান। পরে জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে অন্য এলাকায় আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব।
র্যাবের কমান্ডার বলেন, পিকআপচালক সাইফুলের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও দুই বছর ধরে পিকআপ, চান্দের গাড়ি ও ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালাতেন তিনি। দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ওই পিকআপটি দৈনিক পাঁচশ টাকা মজুরিতে চালানো শুরু করেন। ওই পিকআপের মালিক চকরিয়ার মাহামুদুল করিম। তিনি চকরিয়ার সবজির আড়ত থেকে কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী এলাকায় সবজি সরবরাহ করতেন। তার ছেলে তারেক সবজি সরবরাহের তদারকি করতো ও ভাগিনা রবিউল তারেকের সহযোগী হিসেবে থাকতেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ৪ বছর ধরে পিকআপের ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন নেই। আর গত ৩ বছর ধরে রুট পারমিট মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। দুর্ঘটনা পর থেকে পিকআপের মালিক, তার ছেলে তারেক ও ভাগিনা রবিউল পলাতক রয়েছেন।
এ ঘটনার সঙ্গে কোনো পূর্ব শত্রুতার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কি-না জানতে চাইলে মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন কোনো তথ্য মেলেনি। ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে চালক সাইফুল সামনের কাউকে দেখতে পারেননি। অধিক গতির কারণে কাছাকাছি এসেও ব্রেক করে পিকআপটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। সাইফুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।