• আজ ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেতুমন্ত্রী যে ক্ষতি করছেন তা পুষিয়ে নিতে কষ্ট হবে

| নিউজ রুম এডিটর ১২:১০ অপরাহ্ণ | মার্চ ১১, ২০২২ জাতীয়, বাংলাদেশ, লিড নিউজ

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষতি করে যাচ্ছেন। সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আওয়ামী লীগের অনেক কষ্ট হবে বলে মন্তব্য করেছেন নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী।

সিঙ্গাপুরে হার্টে অস্ত্রোপচারের আগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৯টার দিকে ফেসবুক লাইভে তিনি এসব কথা বলেন।

তবে কিছুক্ষণ পর তিনি লাইভ ভিডিওটি সরিয়ে নেন। এর আগে ১৮ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে নিজের জন্য সবার কাছে দোয়াও চান তিনি। ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন- কাদের ভাই, নোয়াখালী আওয়ামী লীগকে বাঁচান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বাঁচান। আপনি কেন বোঝেন না, নেত্রী (শেখ হাসিনা) বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনাকে চুপ থাকার জন্য বলছে।

আপনার কার্যকলাপ কেউ পছন্দ করছে না। কয়েকজন সুবিধাবাদী ছাড়া নোয়াখালীর বেশিরভাগ মানুষের কাছে আপনি ঘৃণিত। বড় ভাইয়ের স্থানটি আমি আপনাকে দিয়েছিলাম। কিন্তু ছোট ভাইকে (কাদের মির্জাকে) আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। আপনি আমাকে এক টাকার সুবিধাও দেননি। বরং আমি যে কাজগুলো চেয়েছি তা যেন না পাই সে ব্যবস্থা করেছেন। তবে আপনাকেও জবাবদিহি করতে হবে। জবাব তো ইতোমধ্যে দিচ্ছেন ছোট ভাইয়ের কাছে। ভাবির সম্বন্ধে একজন অভদ্রলোক ছাড়া কেউ এভাবে বলতে পারেন না। আপনি বিচার করতে জানেন না। আপনি ছোট ভাইকে কন্ট্রোল করতে না পারলে একটা দিন আমাকে দিয়ে দেখুন।

এমপি একরাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার দুঃখ লাগে। আমরা কোন দেশে আছি! যেভাবে আপনার (কাদের মির্জা) ভাই এসপি, ওসি, ইউএনওকে বলে কুলাঙ্গার। উনি (কাদের মির্জা) কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী, ঊনি প্রশাসনকে এভাবে কথা বলেন? আপনার কারণে আমাদের অনেকের মুখ বন্ধ। আমার মুখ বন্ধ বিশেষ করে জননেত্রী শেখ হাসিনা ৪-৫ বার খবর পাঠিয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক ভাইয়ের মাধ্যমে। আমি যেন কোনো কথা না বলি। আজকে কথাগুলে বলছি, যেহেতু হার্ট অপারেশন। বাঁচতেও পারি, মরেও যেতে পারি।

কাদের মির্জাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি আপনার বুকে হাত রেখে বলুন তো, গত ১০-১৫ বছরে কত টাকা আমার কাছ থেকে নিয়েছেন? কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন। আর এখন সাধুবাবা সেজেছেন। এখন আপনি যেগুলো করে যাচ্ছেন কোম্পানীগঞ্জের মানুষ সারা জীবন আপনাকে ঘৃণা করবে।

তিনি বলেন, আপনি (কাদের মির্জা) কথায় কথায় বলেন আমার ছেলের হাতে অস্ত্র। আমি ২৬টি খুন করেছি-একটা খুনের প্রমাণ দিতে পারবেন? আপনি নিজেও বলেন, আপনার ভাগনেরা বলে-আপনারা রাজাকার ফ্যামিলি। এ কথা আমি বলার কারণে আপনার বড় ভাই আমাকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বাদ দিয়েছেন। কিন্তু আপনারা কি ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারবেন? পাঞ্জাবিদের হাতে ধরা পড়ার তিন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছিল আপনার বাবা তার বিদ্যালয়ের ছাত্র না বলাতে। অথচ আমার বাবা প্রয়াত হাজি ইদ্রিছ মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির উদ্দেশে তিনি বলেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এএইচএম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম একটা জালিমের থেকেও খারাপ। ৪০ বছর সে চরবাটাকে শাসন করেছে। কিন্তু কী দুঃশাসন করেছে সেটা আমি এমপি হওয়ার পর জেনেছি। কাদের সাহেবের বিরুদ্ধে আমি ২০০১ সালে নির্বাচন করেছিলাম। ওই অবস্থান থেকে ২০০৮ সালে আমাকে দলে নেওয়া হলো। ২০০৮ সালে এসে নোয়াখালী-৪ আসন থেকে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করে দেন কাদের ভাই। উনি মনে করেছেন, ওটা তো বিএনপির ঘাঁটি-একরাম জিতবে না। তখন অনেক বড় বড় নেতা আমাকে ইঙ্গিত-আকারে বলেছেন তাকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য। অনেক কষ্টে কাদের ভাই ১১শ ভোট নিয়ে জিতলেন। তাও আমার ইউনিয়নের ভোট নিয়ে।

তিনি বলেন, নোয়াখালীর ছাত্র, যুব, স্বেচ্ছাসেবক, শ্রমিক, মহিলা আওয়ামী লীগ আমার দুঃসময়ের কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেছে। আমি তাদের ছিলাম, আছি, ভবিষ্যতেও বেঁচে থাকলেও থাকব। কোম্পানীগঞ্জের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক কিনা আমাকে ভাবিয়ে তোলে। তারা কিভাবে ওই লোকটার (কাদের মির্জা) মিথ্যা কথাগুলো বসে বসে শোনে আর হাততালি দেন। আমি স্যালুট জানাই, বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, মিজানুর রহমান বাদল, সেতুমন্ত্রীর ভাগনে মাহবুবুর রশিদ মঞ্জু, ফখরুল ইসলাম রাহাতকে। তবে ওবায়দুল কাদেরকে জানাই চরম ঘৃণা।