• আজ ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

’পল্লীবন্ধু পদক’ পেলেন কলিমউল্লাহ, জাফরুল্লাহ, শাইখ সিরাজ সহ ৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি

বিশেষ প্রতিনিধি: বিশিষ্ট ৮ ব্যক্তির হাতে ‘পল্লীবন্ধু পদক-২০২১’ তুলে দিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯২তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রথমবারের মতো এই পদক দেওয়া হলো। প্রয়াত এরশাদের নামে প্রবর্তিত এই পদক তার প্রত্যেক জন্মবার্ষিকীতে প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি।

রোববার (২০ মার্চ’) হোটেল সোনারগাঁওয়ে জমকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পদক, সম্মাননা, উত্তরীয় এবং চেক হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে এরশাদের কর্মময় জীবনের উপর আলোচনা করেন মরহুম এরশাদের ভগ্নিপতি হাবিবুর রহমান।

এবার শিক্ষায় অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, স্বাস্থ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ উল্ল্যাহ চৌধুরী, সাহিত্যে কবি ফজল সাহাবুদ্দিনের (মরণোত্তর), কৃষিতে বিশিষ্ট কৃষি সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার কামরুল ইসলাম সিদ্দিক (মরণোত্তর), ক্রীড়ায় বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ গোলাম সরোয়ার টিপু, সংগীতে প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর), শিল্পে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পপতি আব্দুল ওয়াহেদ পল্লীবন্ধু পদক পান।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কৈশোর থেকে যৌবন ও শেষ জীবন অবধি তিনি ছিলেন, একাধারে ছাত্র, ডানপিটে কিশোর, তুখোড় খেলোয়ার, সাহিত্যিক, কবি, দক্ষ প্রশাসক, জননন্দিত রাজনীতিবিদ। কারমাইকেল কলেজে অধ্যয়নকালে কলেজ ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন তিনি। সে সময় তিনি একাধারে চার বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

জাপা চেয়ারম্যান জানান, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নকালে হয়েছিলেন ভার্সিটি স্পোর্টস ব্লু । এরপর সৈনিক হিসেবে পেশা গ্রহণ করে তৎকালীন পাকিস্তান সেনা ফুটবল দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন। এছাড়াও খেলতেন সেনাবাহিনী হকি দলে। রাজনীতিতে আসার পর যখন যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই তার নৈপুন্যের ছাপ রেখেছেন। তার ক্ষমতা গ্রহণ যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন এটা আজ সর্বজন স্বীকৃত যে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নয় বছরের শাসনামল ছিল এ দেশে সু-শাসন, উন্নয়ন, সমৃদ্ধির এক নবযুগ। দেশের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে তার উন্নয়ন বা সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি।

জিএম কাদের বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রশাসনিক সংস্কার ও সার্বিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও সংস্কারের সুবিধা সম্প্রসারিত করেছিলেন। সাধারণ পর্যায়ের মানুষ, চাষী, জেলে, দিন-মজুর, শ্রমিকদের জীবনে কিভাবে সুখ-শান্তি-নিরাপত্তা উন্নতি আসতে পারে সে দিকে ছিল তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। তিনি আপামর মানুষের বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ের মানুষের কল্যাণ সাধন ও স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। পল্লীর মানুষের প্রকৃত বন্ধু হতে পেরেছিলেন। সে কারণেই সাধারণ জনগণ তাকে পল্লীবন্ধু খেতাবে ভূষিত করেছেন।’
এছাড়াও কর্ম জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও সাহিত্য র্চচা ও খেলাধুলা অব্যাহত রেখেছিলেন। এ পর্যন্ত তার লেখা ২৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নিজে খেলাধুলা করতেন এবং খেলাধুলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নানান পদক্ষেপ নিয়েছেন। বাংলাদেশে গলফ’র মতো অপ্রচলিত খেলার যে ব্যাপক প্রচলন আজ চোখে পড়ে সেটা সম্ভব হয়েছিল তার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়।

জিএম কাদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফলে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় সৃষ্টি করছে, অনেক খেলায় যেমন ক্রিকেটে পৃথিবীব্যাপী প্রতিযোগিতায় সমান তালে লড়াই করতে সক্ষম হচ্ছে। তার কর্মকাণ্ড এতই বিস্তৃত যে, সকল ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা পদক দিতে পারলাম না। এবার আটটি বিষয়ে ‘পল্লীবন্ধু পদক’ ঘোষণা করেছি। আগামীতে এই পুরস্কারের পরিধি আরও প্রসারিত করার প্রত্যাশা রয়েছে আমাদের।

পদক প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় দেশী ও বিদেশী নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান জানিপপ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, জাতীয় সংসদের বিরোধীদল হল জাতীয় পার্টি, সেই অর্থে জাতীয় পার্টি হল ছায়া সরকার। ছায়া সরকারে পক্ষ থেকে সংসদীয় ইতিহাসে এই প্রথম পদকটি দিয়েছে এটি বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

স্বাস্থ্যে পদক পাওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ উল্ল্যাহ চৌধুরী বলেন, ‘এরশাদ আপদমস্তক ভদ্রলোক ও বুদ্ধিমান ছিলেন। তার দৃষ্টি ছিল প্রসারিত। ফেব্রুয়ারি মাসে তার অসামান্য অবদান ছিল। উনি নিয়ম করেছিলেন- সাইন বোর্ড বাংলায় লেখা হতে হবে, রায়ও বাংলায় হতে হবে। উনার আমলে কেউ না খেয়ে থাকেনি। উনার সুচিন্তা না থাকলে এখন জনসংখ্যা ৩০ কোটি হতো।’

শাইখ সিরাজ বলেন, ‘পল্লী উন্নয়নে এরশাদের অবদান অনস্বীকার্য। তার সে সময়ের কাজগুলো বাংলাদেশকে আজকের জায়গায় আসতে অনেক সহায়তা করেছে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে অনেক সময় লাগত, এখন কৃষকরা সহজে পণ্য পৌঁছে দিতে পেরে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন।’

পল্লীবন্ধু পদক প্রদান কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতীর সভাপতিত্বে এবং জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এমএম নিয়াজ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টারাসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।