৩ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ রোজা। রোজা শুধু ধর্মীয় বিধিবিধানের অংশ নয়; বরং এটি বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যনীতিরও একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে।
১৪০০ বছর আগে মুসলিম সমাজে রোজা রাখার রেওয়াজ শুরু হয়েছিল, যা কিনা একই সঙ্গে বিজ্ঞাননির্ভর, স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসিক প্রশান্তির আধার। পৃথিবীতে বসবাসকারী সব মুসলিম ব্যক্তির ওপর রোজা, বিশেষ করে রমজানের রোজাকে ফরজ করা হয়েছে।
কোরআন ও হাদিসে রোজার গুরুত্বের বিবরণ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টির সঙ্গে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রোজা রাখার অভ্যাসে উচ্চ রক্তচাপ, নানা ধরনের হৃদ্রোগবিষয়ক জটিলতা দূর হয়। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও ইতিবাচকভাবে জীবনদর্শনেও রোজা কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, গবেষক ও চিকিৎসকরাও। রোজার সময় খাবার গ্রহণ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এতে আমাদের কোষে বাহির থেকে কোনো খাবার না পেয়ে নিজেই নিজের অসুস্থ কোষগুলো খেতে শুরু করে। চিকিৎসা শাস্ত্রে এই পরিস্থিতিকে বলা হয়েছে অটোফেজি। রোজা নিয়ে বিস্ময়কর ‘অটোফেজি’ তথ্য দিয়ে ২০১৬ সালে নোবেল পেয়েছিলেন জাপানি গবেষক ও বিজ্ঞানী ওশিনরি ওসুমি। বিখ্যাত পুষ্টিবিদ ক্লাইরি ম্যাথিও অটোফেজির এ বিষয়টি মেনে চলেন।
দীর্ঘদিন একইভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্যগ্রহণ করলে শরীরে তা অতিরিক্ত মেদ হিসেবে জমা হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে ক্ষতিকারক টক্সিনের মাত্রাও। কিন্তু দীর্ঘ একটি মাস রোজা রাখলে এ সমস্যা থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ডা. শেলটন তার ‘সুপিরিয়র নিউট্রিশন’ গ্রন্থে বলেছেন, উপবাসকালে শরীরের মধ্যকার প্রোটিন, চর্বি, শর্করাজাতীয় পদার্থগুলো স্বয়ং পাচিত হয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলোর ক্ষতি নয়; বরং পুষ্টি বিধান হয়।
রোজার গুরুত্ব অনুধাবন করে ডা. আইজাক জেনিংস বলেছেন, যারা আলস্য ও গোঁড়ামির কারণে এবং অতিভোজনের কারণে নিজেদের সংরক্ষিত জীবনীশক্তিকে ভারাক্রান্ত করে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়, রোজা তাদের এ বিপদ থেকে রক্ষা করে। বিশ্বখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী নাস্টবারনার বলেন, ফুসফুসের কাশি, কঠিন কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কয়েক দিনের রোজার কারণেই নিরাময় হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, রোজাদার পেপটিক আলসারের রোগীরা রোজা রাখলে অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এতে তাদের শরীর অনেকটাই ফিট থাকে। হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্যও রোজা উপকারী। কিডনি সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের ক্ষেত্রেও রোজা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, রোজা রাখলে কিডনিতে সঞ্চিত পাথর কণা ও চুন দূরীভূত হয়।
রোজা রাখার ফলে আমাদের শরীর নানা ধরনের চাপ নিতে সক্ষমতা অর্জন করে। ফলে রোজাদার ব্যক্তি কখনো খিঁচুনি এবং মানসিক অস্থিরতার মুখোমুখি হয় না।
রোজা সম্পর্কিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন ডাক্তার ক্লিভ। তার পেপটিক আলসার নামক গবেষণামূলক বইয়ে তিনি লিখেছেন: ভারত, জাপান, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ নাইজেরিয়ায় অন্যসব এলাকার তুলনায় মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় পেপটিক আলসার রোগের প্রকোপ অনেক কম। কারণ, তারা সিয়াম পালন করতে দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখেন।
বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড নারায়াড মনে করেন, রোজা মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক রোগ নির্মূল করে দেয়। কারণ, রোজা শারীরিক সক্ষমতা তৈরির পাশাপাশি এনে দেয় মানসিক প্রশান্তিও। তবে ইসলাম শুধু শারীরিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের ওপরই এটি ফরজ করেছে। আপনি যদি শারীরিক জটিলতার কারণে ধর্মীয় এই বিধান অর্থাৎ রোজা রাখতে না পারেন, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকের পরামর্শ এ ক্ষেত্রে গ্রহণ করুন।
সূত্র: আলজাজিরা