• আজ ২রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
 মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ মারা গেছেন | ফ্যাসিস্টরা নববর্ষকে দলীয় হাতিয়ারে পরিণত করেছিল: নাহিদ | দেশ থেকে অশুভ দূর হয়েছে, যতটুকু আছে তাও চলে যাবে: প্রেস সচিব | ড: ইউনূস পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবেন কীভাবে, প্রশ্ন মান্নার | গাজায় বর্বরতার প্রতিবাদ: কানাডা-ইউরোপেও ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ | যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনের বেশি থাকা বিদেশিদের নিবন্ধন করার নির্দেশ | নেতানিয়াহুর ছবিতে পেটানোর খবর ইসরাইলের গণমাধ্যমে | সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ | মার্চ ফর গাজা: সোহরাওয়ার্দী যেন এক টুকরো ফিলিস্তিন | সাবেক এমপি হাবিব হাসানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা |

মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেল দরিদ্র কৃষকের ছেলে দুলাল

| নিউজ রুম এডিটর ৪:৫৯ অপরাহ্ণ | এপ্রিল ৯, ২০২২ লালমনিরহাট, সারাদেশ

আজিজুল ইসলাম বারী, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের তিস্তা পাড়ের দরিদ্র কৃষকের ছেলে দুলাল হোসেন এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। জমি বন্ধক রাখা টাকা দিয়ে পড়াশোনা করে তার এমন সাফল্যে গোটা চরবাসী আনন্দিত।

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৮৩.৫ পেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন দুলাল হোসেন। দুলাল হোসেন হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের আবুল হোসেনের ছেলে। তার বাবা কৃষক। অদম্য ইচ্ছায় ছেলের লেখাপড়ায় উৎসাহ দিয়ে আসছেন তিনি।

অভাবের সংসার। জায়গা-জমি বলতে তিস্তার চরে রয়েছে মাত্র ১০ বিঘা জমি। তিস্তার বাঁধের ধারে তাদের বাড়ি। বাড়ি ভিটার জায়গাটিও সরকারি পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

দুলাল হোসেন চার ভাই এক বোনের মধ্যে তৃতীয়। বড় দুই ভাই আব্দুস সবুর ও স্বপন আলী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। এক বোনের বিয়ে হয়েছে। মা ২০২০ সালে মারা যান। সবার ছোট ভাই মমিনুল ইসলাম সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

দুলাল হোসেন হাতীবান্ধা সরকারি আলিমুদ্দিন ডিগ্রী কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এর আগে তিনি দোয়ানি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ছোট থেকেই অদম্য মেধাবী দুলাল।

দুলাল হোসেনের বাবা আবুল হোসেন বলেন, ছেলেকে অনেক কষ্টে পড়াশোনা করিয়েছি। ছেলের পড়াশোনা করাতে গিয়ে ১ বিঘা জমি ৬০ হাজার টাকায় বন্ধক দিয়েছি। ছেলে আমার আশা পূরণ করেছে। আপনারা আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।

দুলাল হোসেন বলেন, দারিদ্র্যের কষাঘাতে পড়াশুনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল আমার। একসময় ভেবেছি আর আমার দ্বারা পড়াশুনা হবে না। এরমধ্যে মা চলে গেছেন ওপারে। আবারো হতাশ হয়ে পড়েছি। এতকিছুর মাঝেও স্যারদের সহযোগিতায় আবারও পড়াশোনা শুরু করি। হাতীবান্ধা সরকারি আলিমুদ্দিন ডিগ্রী কলেজে ভর্তির পর তিন থেকে চারটি টিউশনি নিই। প্রতি মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা আসতো। সেটা দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতাম। টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়া হয়নি আমার। বাড়িতে এসে একা একাই গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করি।

এরপর এইচএসসি পাস করলাম জিপিএ-৫ নিয়ে। বাবার ইচ্ছা মেডিকেলে পড়ানোর। কিন্তু বাবার হাতে কোনো অর্থ নেই। তখন বাবা এক বিঘা জমি ৬০ হাজার টাকায় বন্ধক রেখে আমার হাতে তুলে দেন। সেই টাকা দিয়েই শুরু করি পড়াশুনা।

তিনি বলেন, অভাব-অনটনের সংসারে অনেক ইচ্ছাই পূরণ হয়নি। কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে আসছি। আমার ইচ্ছা ছিল প্রকৌশলী হওয়ার কিন্তু বাবার ইচ্ছা মেডিকেলের। আজ আমার বাবার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক হওয়ার পর অসহায় গরিব মানুষদের বেশি প্রাধান্য দেবো। গরিব মানুষের পাশে থাকবো।

হাতীবান্ধা সরকারি আলিমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক শরিফুল ইসলাম জানান, দুলাল অদম্য মেধাবী ছাত্র। আমার ছাত্রাবাসে তার কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নিতাম। সে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে আজ সাফল্যের মুখ দেখেছে। আমি তার সফলতা কামনা করি।

সানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম তালুকদার জানান, তিস্তারচর এলাকা থেকে এই প্রথম একজন ছাত্র সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। আমরা তার সাফল্য কামনা করি।