চাল বিক্রিতে জড়িত জেলা ছাত্রলীগ সহ সভাপতির ‘মা
স্টাফ রিপোর্ট: পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দরিদ্রদের উপহারের চালের বস্তা সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে একটি মুদি দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। চালগুলো বিতরণ না করে উপজেলার ১নং শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কৌশলে সরিয়ে মুদি দোকানির কাছে বিক্রি করা হয় বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ওই ইউনিয়নের সীমান্ত লাগোয়া লালঘাটের মৃত মিছির আলীর ছেলে ইছব মিয়ার মুদি দোকান থেকে ৭ বস্তা (প্রতিবস্তায় ৫০ কেজি) ৩৫০ কেজি ভিজিএফের চাল উদ্ধারের পর থানার টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি হেফাজতে নেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিনের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই চাল উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারা দেশের মতো তাহিরপুরের ১নং শ্রীপুর ইউনিয় পরিষদে ৯ ওয়ার্ডে বসবাসরত দুঃস্থদের মধ্যে জনপ্রতি ১০ কেজি করে বিতরণের জন্য ৩১ মেট্রিক টন ৪৬০ কেজি ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই বরাদ্দকৃত চাল মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদে বিতরণ করা হয়।
ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১ ও ২নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য মিনারা বেগম তার ওয়ার্ডের বিপরীতে ২০০ জন উপকারভোগীর নামে নানা কৌশলে মাস্টাররোল দাখিল করে জনপ্রতি ১০ কেজি করে চাল বিতরণের নামে ৪০ বস্তা (প্রতিবস্তায় ৫০ কেজি) ২ হাজার কেজি ভিজিএফের চাল বাগিয়ে নেন।
এরপর ইউপি সদস্য রহিমার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল চালক লালঘাট সীমান্ত গ্রামের মৃত মঞ্জিল মিয়ার ছেলে শামছুল হকের সহযোগিতায় ভুয়া টোকেনে সবার চোখে ধুলো দিয়ে একাধিক চালের বস্তা পরিষদ থেকে কৌশলে সরিয়ে নেন।
সরিয়ে নেওয়া চালের মধ্যে বুধবার রাতে ভিজিএফের বেশ কয়েক বস্তা চাল লালঘাট সড়কে থাকা মুদি দোকানদার ইছব মিয়া ও অন্যদের কাছে বিক্রয় করে দেন ইউপি সদস্য মিনারার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলচালক শামছুল হক।
ইছব মিয়ার দাবি, শামছুল হক আমার স্ত্রীর কাছে চাল বিক্রির জন্য দোকানে দিয়ে গেছে, তখন বাইরে কাজে ছিলাম।
বিষয়টি গ্রামবাসীর নজরে আসলে বুধবার রাতে উপজেলার লালঘাট গ্রামের লোকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং থানা পুলিশকে অবহিত করেন।
উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ ভিজিএফের চাল উদ্ধার করার পূর্বেই বৃহস্পতিবার রাত পোহানোর পরই লালঘাট মুদি দোকান থেকে ভিজিএফের চাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান ইউপি সদস্য মিনারা ও তার স্বামী নাসির উদ্দিন। সেখানে গ্রামবাসীর তোপের মুখে আত্মসাৎকৃত চাল সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য ও তার স্বামী।
উপজেলার ১নং শ্রীপুর ইউনিয়নের ১ ও ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিনারা বেগম নিজেকে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির সহ-সভাপতি মনির হোসেনের ‘মা’ পরিচয় দিয়ে বলেন, পারিশ্রমিক বাবদ বিভিন্ন নামে শামছুল হককে ১ বস্তা চাল দিছিলাম, বাকি ৫ বস্তা চাল লালঘাট গ্রামের ২৫ জনের নামে দেওয়া হয়, হয়ত চাল বিতরণ করেনি, দেখি কীভাবে সমাধান করা যায়।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রায়হান কবির জানান, ভিজিএফের চাল উদ্ধার করা হয়েছে, চাল বিতরণ না করে আত্মসাৎ করায় সংশ্লিষ্ট সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যসহ জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।।