

ইবি প্রতিনিধি: শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহ’র রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস। এসময় তারা ক্যাম্পাসের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের জোর দাবি জানায়।
শনিবার (২৬ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বিক্ষোভের উদ্দেশ্যে জড়ো হতে শুরু করে। সেখানে দলে দলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশত শিক্ষার্থী অংশ নেন। এসময় ক্যাম্পাসের ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। পরে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘প্রশাসনের টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বাজেট নাই বাজেট নাই, বাজেট কী তোর বাপে খায়’, ‘সাজিদ ভাইয়ের বিচার চাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আমরা লাশ দেখে প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। আমাদের জানানোর প্রায় পৌঁনে এক ঘণ্টা পর সেই লাশ উদ্ধার করা হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে থানা হওয়ার পরেও পুলিশ আসতে এতো সময় লাগলো কেন? এছাড়া লাশ উঠানোর প্রায় আধা ঘণ্টা পার হলেও সেখানে কোন ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। পরে আমরা বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই। পরে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ.ব.ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আল কুরআন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন মিঝি ও অধ্যাপক ড. মোহা. জালাল উদ্দিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক শাহেদ আহমেদ, শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সেক্রেটারি ইউসুব আলী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট, খেলাফত ছাত্র মজলিসের শাখা সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখা সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ গালিব, তালাবায়ে আরাবিয়া ইবি শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসানসহ কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী।
সাজিদের বন্ধু ইনসান বলেন, ‘প্রশাসন ৬ দিন সময় দিয়েছিলেন, কিন্তু এখনো রিপোর্ট প্রকাশ করেননি। প্রশাসন যদি গড়িমসি করে তাহলে পরবর্তীতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
খেলাফত ছাত্র মজলিসের শাখা সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ বলেন, ‘প্রশাসন ব্যর্থতার প্রমাণ করে দিয়েছে। এতদিন সাজিদ হত্যার তদন্ত ছাড়াও নিরাপদ ক্যাম্পাসের জন্য দাবি পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখছি না।’
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখা সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের পর দ্বিতীয় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তবে ৬ দিন সময় দিয়েছিল কিন্তু তা তো হাওয়া মনে করছে প্রশাসন। যদি দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে নিয়ম ভেঙে আন্দোলন করা হবে।’
ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ গালিব বলেন, ‘যে প্রশাসন এতদিন মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি সেই প্রশাসনকে মৃত ঘোষণা করা হবে।’
তালাবায়ে আরাবিয়া ইবি শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ‘এতদিন হয়ে গেল, কেন গড়িমসি করা হচ্ছে? কারা তদন্তে বাঁধা দিচ্ছে তা দেখিয়ে দিন।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের শাখা সভাপতি মুহা. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আল কুরআন বিভাগ পরীক্ষা বর্জন করে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। সাজিদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বের করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন সময় ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাস সংস্কারের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছিল কিন্তু কোনো রেসপন্স পাইনি। যদি শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট না বুঝেন বা শিক্ষার্থীদের কাতারে না আসেন এবং আপনারা যদি বিপ্লবী প্রশাসনের ভূমিকা রাখতে না পারেন আল্লাহর ওয়াস্তে নেমে যান।’
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি- সাজিদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করুন। তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে সেটার দ্রুত রিপোর্ট পেশ করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কতক্ষণের মধ্যে রিপোর্ট প্রকাশ করবে তা স্পষ্ট করুন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখবো। আন্দোলনের সময় কেউ শিক্ষকদের গায়ে হাত না দেয় এবং বিশৃঙ্খলা না করতে পারে সেই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের জানা আছে, একটা গ্রুপ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। যদি হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে তাহলে এর দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখা সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘সাজিদ হত্যার ৯ দিন হয়ে গেছে কিন্তু এখনও কোনো ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করেননি প্রশাসন। জুলাইয়ের পরেও জনগণ বা শিক্ষার্থীদের ম্যানডেট না বুঝেন তাহলে আগের নজিরের ব্যত্যয় হবে না এবং আপনাদের নেমে যেতে বাধ্য করা হবে। দ্রুত রিপোর্ট পেশ করে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন, অন্যথায় পালানোর পথ পাবেন না।’
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন মিঝি বলেন, ‘আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রথম থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমরা লক্ষ করছি- একদল ষড়যন্ত্রকারী সাজিদের লাশ নিয়ে বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। আমাদের বিভাগের নেতৃত্বে প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে হলেও প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করাবো ইনশাআল্লাহ। আমি প্রশাসনকে বলব- আপনারা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখালে পরিণত ভয়াবহ হবে।’
রুটিন ভিসির দায়িত্বে থাকা প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, ‘তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ছুটির দিন বাদে ৫ দিন কার্যদিবস পেয়েছে তদন্ত কমিটি। আশা করছি- ভিসেরা রিপোর্ট হাতে পেলে চলতি সাপ্তাহের মঙ্গল/বুধবারের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারবো।’
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করে শাখা ছাত্রদল। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হয় তারা। এদিকে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের দাবিতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করে। একই দাবিতে ১৮ জুলাই রাতে টর্চলাইট মিছিল করেছে শাখা ছাত্রশিবির। তাছাড়াও রাতেই ইবির ছাত্রীহলগুলোতে অবস্থানকারী ছাত্রীরা রাতেই হলের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৬ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং রুমে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়।