মো: রেদওয়ানুল হক মিলন, ঠাকুরগাঁও: যাত্রীদের সুবিধার্থে ২০০৩ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার অধীনে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে পাঁচ বিঘা জমির ওপর এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয় জেলা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি। তৎকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এ টার্মিনালটির উদ্বোধন করেন। পাকা ভবনের নিচে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা, ক্যান্টিন, কাউন্টার, টয়লেট ও নামাজের ব্যবস্থা এমনকি যাত্রীদের খাবার ও কেনাকাটার জন্য দোকান ঘর থাকলেও নেই শুধু বাস, আর যাত্রীর কোলাহল।
নির্মাণের দুই দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো চালু হয়নি এই বাস টার্মিনাল। সব ধরনের সুবিধা থাকার পরও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অদৃশ্যতার কারণে দৃশ্য মান হচ্ছে না টার্মিনালটি। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে কষ্ট করে রাস্তা থেকেই বাসে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের। পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় ও বহিরাগতদের প্রবেশে এখন মাদকসেবী ও অসামাজিক কার্যকলাপসহ অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে এটি।
রবিবার (৮ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার একমাত্র বাঁস টার্মিনালটি মানব শূন্য। দুটি বিশ্রামাগার ও একটি টিকিট কাউন্টার থাকলেও তা তালাবদ্ধ। পরিষ্কার না করায় ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে ভবনের চার পাশ। ভেঙে পড়চ্ছে দরজা-জানালা। ভেতরে বেশ কয়েকটি বাঁস থাকলেও তা বিকল। দিনাজপুর-পঞ্চগড়ের যাত্রীরা ওঠানামা করছে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কের ওপর থেকে।
স্থানীয়রা জানান, টার্মিনাল থাকার সত্যেও পরিবহন কোম্পানিগুলো ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে। এতে দুর্ঘটনা যেমন ঘটছে তেমনি সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বাধ্য হয়ে যাত্রীদের রোদ-বৃষ্টিতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও টার্মিনালটি চালু না হওয়ার পেছনে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাই দায়ী বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
অন্যদিকে যাত্রীরা জানান, তারা নিয়মিত কাজে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। টার্মিনালে বাস না থাকায় তারা বাসের জন্য দীর্ঘ সময় মহাসড়কের পাশেই চায়ের টঙে অপেক্ষা করতে হয়। এ সময় তাদের প্রসাব-পায়খানার চাপ অনুভূত হলেও কিছুই করার থাকে না। সরকার এত টাকা দিয়ে টার্মিনাল তৈরি করে দিয়েছে, তা এখন মাদকসেবীদের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তাদের আশা কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি হায়দার আলী বাবলু বলেন, টার্মিনালটি কয়েক দফা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যাত্রীরা সেখানে যেতে চান না। আবারও টার্মিনালটি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমানআরা বেগম জানান, আমরা চাই টার্মিনালটি চালু হোক। বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। যাত্রীদেরও সচেতন হওয়ার একটি বিষয় রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে টার্মিনালটি যাতে চালু হয় সেজন্য সবাইকে মিলে একটি উদ্দ্যেগ গ্রহণ করতে হবে।