পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গত তিন দিন ধরেই পদ্মাপার এলাকা সেজেছে বর্ণিল রূপে। নানা রঙ-বেরঙের ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পদ্মাপার। কিছুক্ষণ পরই পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে প্রমত্তা পদ্মায় লাল-সবুজের ৮০টি নৌকা প্রস্তুত রয়েছে।
এরই মধ্যে ঐতিহাসিক সাক্ষী হতে মাওয়া প্রান্তের সমাবেশস্থলে হাজির হচ্ছেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সরকারের আমন্ত্রিত অতিথিসহ সাধারণ মানুষ।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের সমাবেশস্থল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকে মাওয়ায় পৌঁছেছেন। এরই মধ্যে পৌঁছেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ আরও অনেকে।
সমাবেশস্থলে হাজির হয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে দেশি-বিদেশি সবাই শুভেচ্ছা জানালেও বিএনপি জানাতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান অভিনন্দন জানালেও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে— বিএনপি এখনো পদ্মা সেতু নির্মাণে শুভেচ্ছা বা অভিনন্দন জানায়নি। এটি তাদের চরম রাজনৈতিক দৈন্যতা।
তিনি বলেন, ছোটবেলা ঈদের চাঁদ দেখলে যে আনন্দ হতো, আজ তার চেয়ে বেশি আনন্দ লাগছে। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ উচ্ছ্বসিত। যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিল তারা এখন লজ্জিত। যেসব বিদেশি সংস্থা অর্থায়ন বন্ধ করেছিল, তারাও আজ পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বসিত।
সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুর জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষ্যে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসহ মাওয়া প্রান্তে সকাল থেকেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পদ্মার পার সেজেছে নতুন রূপে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এ আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশসহ আরও অনেকে পৌঁছেছেন পদ্মাপারে।
এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রয়েছে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট এবং আশপাশের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা। সভাস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা।
সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের বৃহত্তম স্ব-অর্থায়নকৃত এ মেগা প্রকল্পের জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির সময়সূচি অনুযায়ী মাওয়া পয়েন্টে বেলা ১১টায় তিনি স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করবেন।
এর আগে তিনি হেলিকপ্টারযোগে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মাওয়া পয়েন্টে কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। পরে বেলা ১১টা ১২ মিনিটে মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন।
তিনি বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল ২-এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন তিনি।
দুপুর ১২টায় মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত দলের জনসভায় যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বিকাল সাড়ে ৫টায় হেলিকপ্টারে জাজিরা পয়েন্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।