গত ৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহাকারী সচিব শতরূপা তালুকদার সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে রাজশাহী জেলার চার কলেজকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধিভুক্ত করা হয়।
এ সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল এবং সাধারণ সম্পাদক আশিকুর হৃদয় এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন “ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজসমূহের শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ- আলোচনা না করেই সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক উপায়ে একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত চাপানো হয়েছে। অধিভুক্ত করণের বাস্তব ভিত্তি, ফলাফল এবং প্রাপ্তি অনুসন্ধান করে কোনো গবেষণা প্রতিবেদন আমাদের সামনে আসেনি। প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে হাজারো শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা জড়িত। কোনো প্রকার যৌক্তিক ভিত্তি নিরুপণ এবং প্রকাশ ছাড়াই খেয়ালখুশির নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গেলে এই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত হুমকি সম্মুখীন হবে।”
সিদ্ধান্তের পরিণতি হবে ধ্বংসাত্মক উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ৭ কলেজের বর্তমান সংকটময় পরিণতি, আরোপিত সিদ্ধান্তের বিষময় ফলাফল জানান দিচ্ছে। কলেজগুলোয় ভর্তি প্রক্রিয়ায় ভোগান্তি, ক্লাস লেকচার এবং প্রশ্ন পত্রের অসামঞ্জস্যতা, ফলাফল প্রদানের দীর্ঘসূত্রিতা, ব্যয়বৃদ্ধি, ফলাফল বিপর্যয়, সেশনজট সহ বহুমুখী সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা বিপর্যস্ত এবং আন্দোলনরত।
ঢাকার ৭ কলেজের সংকটের কোনো সমাধানযোগ্য রূপরেখা অর্জন না করেই রাজশাহী ও চট্টগ্রামের শীর্ষ কলেজগুলো নিয়ে অনুরূপ সিদ্ধান্ত একই পরিণতিই বয়ে আনবে। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু বিভাগ সেশনজট, শিক্ষকসংকট সহ নানান সমস্যায় জর্জরিত। এমন অবস্থায় ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে কলেজ অধিভুক্তির বাড়তি চাপ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার অবশিষ্ট পরিবেশটুকুকেও বিঘ্নিত করবে। একইসাথে অধিভুক্ত এই ৪ কলেজের একাডেমিক-প্রশাসনিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।”
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষার যে সংকট বিদ্যমান, সরকার কখনোই তা নিরসনের বাস্তব প্রচেষ্টা গ্রহণ করেনি। উপরন্তু শীর্ষ কলেজগুলোকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার একটি অন্তঃসারশূন্য উদ্যোগ নিয়েছে। যা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মানে কোনো উন্নয়ন তো আনছেই না বরং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানবৃদ্ধির পক্ষের জনমতকে বিভক্ত ও দুর্বল করছে। একইসাথে শীর্ষ কলেজ সমূহের বাইরের অসংখ্য কলেজে অধ্যয়নরত লাখো শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষার দাবিও আড়াল হচ্ছে। মূলত এই রাষ্ট্র এবং সরকার অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রদানের দায়িত্ব অস্বীকার করতে চায়। অধিভুক্তির এই সিদ্ধান্ত তারই ইঙ্গিত বহন করে।”
পরিশেষে, নেতৃবৃন্দ রাজশাহী জেলার ৪ গুরুত্বপূর্ণ কলেজকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার অন্তঃসারশূন্য, ধ্বংসাত্মক এবং হঠকারী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান। এবং এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সহ রাজশাহী সরকারি কলেজ, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ ও নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান করেন।