• আজ ২১শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্থানীয় আধিপত্য ও ড্রেজিং বানিজ্যের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ ও ককটেল বিষ্ফোরন!

| নিউজ রুম এডিটর ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ | নভেম্বর ৫, ২০২৫ মুন্সীগঞ্জ, সারাদেশ

 

সিরাজদিখান প্রতিনিধিঃ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার লতন্দী ইউনিয়নের কংশপুরা এলাকায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার ও ড্রেজিং ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ২৫ অক্টোবর দুপুর অনুমান সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা লতব্দী ইউনিয়নের কংশপুরা কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে হামলার এ ঘটনা ঘটে। এতে কংশপুরা গ্রামের মিখন মাহমুদ ও আব্দুল হামিদ গুরুত্বর আহতসহ মঞ্জু ও নূর মোহাম্মদ নামে আরো দুইজন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে মিখন মাহমুদ ও আব্দুল হামিদের আঘাত গুরুত্বর হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসক তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করেন। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান আসামী(ইউপি সদস্য)সহ ৩০ জনকে এজাহার নামীয় আসামীসহ ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামী করে সিরাজদিখান থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার নং-৩৯।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়,
২৫ অক্টোবর দুপুর অনুমান সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা লতব্দী ইউনিয়নের কংশপুরা কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শলিলুর রহমান খলিল মাহমুদের ছেলে মিখন মাহমুদ মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুন ও তার সহযোগী আহসান উল্লাহ দেওয়ান, এনামুল দেওয়ান, জামিল দেওয়ান, আল-আমিন দেওয়ান, আশরাফ আলী দেওয়ানসহ আরো বেশ কয়েকজন তার গতিরোধ করে গালিগালাজ শুরু করে। মিখন তাদের গালিগালাজে বাধা দিলে আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তার সহযোগী আহসান উল্লাহ দেওয়ান, এনামুল দেওয়ান ও জামিল দেওয়ান রামদা লোহার রড ও চাপাতি দিয়ে কোপ ও বারি মারলে মিখনের ডান হাত ও মাথায রক্তাক্ত জখমসহ বাম হাত ভেঙে যায়। মিখনের ডাক চিৎকার শুনে ভাই মঞ্জু এগিয়ে এলে তাকেও লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। ওই দিন বিকাল ৫টার দিকে কংশপুরা এলাকায় দ্বিতীয় বার হামলা চালায় প্রতিপক্ষ মামুনসহ তার লোকজন। এসময় তারা মিখনের ভাই আব্দুল হামিদকে এলোপাথারী ভাবে পিটিয়ে গুরুত্বর জখম করে। তার ডাক চিৎকারে ভাই নূর মোহাম্মদ ও ভাগিনা নিয়ামুল এগিয়ে গেলে তারা তাদেরও পিটিয়ে আহত করে। এক পর্যাযে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে অভিযুক্ত মানুন ও তার লোকজন। স্থানীয়রা জানায়, হামলার সময় প্রতিপক্ষ মামুনসহ তার লোকজন খলিলুর রহমান খলিল মাহমুদের ২ টি ড্রেজার ভাঙচুর করে ড্রেজারের মেশিন খুলে মূল্যবান যন্ত্রাংশসহ পাইপ লুটসহ ১ টি ড্রেজারে অগ্নি সংযোগ করে। এ ঘটনায় স্থানীয় ভাবে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, একই ঘটনায় আব্দুল্লাহ আল মামুন পক্ষের জাকিয়া খাতুন নামে এক নারী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান খলিল মাহমুদকে প্রধান আসামীসহ ১৮ জনকে এজাহার নামীয় আসামীসহ ২০-৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে অপর আরো একটি মামলা দায়ের করা করেন। যার নং-৪০।

অন্যদিকে হামলার শিকার মিখন মাহমুদের পিতা খলিলুর রহমান খলিল মাহমুদ তার ছেলের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থান করলেও প্রতিপক্ষ জাকিয়া খাতুনের দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামী করে হয়রানীর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী খলিলুর রহমান খলিল মাহমুদের।

হামলার শিকার মিখনের পিতা ভুক্তভোগী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান খলিল মাহমুদ বলেন,ড্রেজার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মামুন মেম্বারের নেতৃত্বে তারা আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্য মারধর করে খালে ফেলে রাখে। আমিসহ আমার লোকজনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। আমি ঢাকায় ছেলের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমি ঘটনার আশপাশেও ছিলাম না। মামুন মেম্বাররা অনেক আগে থেকেই ড্রেজিংয়ের ব্যবসা করে এবং সে এলাকায় মাটি কেটে বিক্রি করে আসছে। আমার ছেলে তিন মাস ধরে ২ টা ড্রেজার কিনেছে। এ কারণেই তারা আমার ছেলেকে মেরেছে।তারা আমার দুটি ড্রেজার ভাংচুর করে ড্রেডারের যন্ত্রাংশ ও পাইপসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে মামুন ও তার লোকজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই। সেই সাথে লতব্দীতে যেন আর কোন ড্রেজার চলতে না পারে সে জন্য প্রশাসনের নজরদার ও হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি এর কিছুই জানি না। ওই সময় আমি ঘরে শুয়ে ছিলাম। অথচ তারা আমাকে প্রধান আসামী করে মামলা দিয়েছে। আমি ঢাকা আছি, ঢাকা থেকে এসে এটা নিয়ে আমি সংবাদ সম্মেলন করবো!

অভিযুক্ত জাকিয়া খাতুনের সাথে যোগাযোগে চেষ্টা করা হলে তার ফোন অন্য এক ব্যক্তি রিসিভ করে বলেন তিনিতো এখানে নেই। পরে ফোন দিয়েন।

সিরাজদিখান থানার (ওসি) মোঃ আবু বকর জানান, যেহেতু অবৈধ মালামাল নিয়ে ঘটনা ঘটেছে। সেহেতু অবৈধ মালামাল জব্দ করে থানায় জিডি মূলে রাখা হয়েছে। আর এ নিয়ে কারো কোন অভিযোগ নেই। তবে থানায় উভয় পক্ষের মামলা দায়েরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মামলার পরিস্কার করেন নি।