

গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক দম্পতিসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের মোবারকের ছেলে মিজান ওরফে কেটু মিজান, তার স্ত্রী গোলাপি, স্বাধীন, আল আমিন ও সুমন। তাদের মধ্যে মিজান ওরফে কেটু মিজান মহানগরীর বাসন থানার চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার মঞ্জু মিয়ার বাড়িতে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। গ্রেফতারকৃতরা ছিনতাইকারী দলের সক্রিয় সদস্য এবং সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ঘটনার শুরুতে ভিডিওতে যে নারীকে দেখা গেছে যাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা, তিনি হলেন কেটু মিজানের স্ত্রী গোলাপি। এ ছাড়া ফুটেজে চাপাতি হাতে কোপানোর জন্য যাকে দৌড়াতে দেখা যায় তিনি কেটু মিজান। সাদা শার্ট ও জিনস প্যান্ট পরা চাপাতি হাতে দাঁড়ানো ছিলেন স্বাধীন। অপরজনের নাম আল আমিন।
অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান বলেন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান হত্যার পরপরই স্থানীয় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেই ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়। পরে তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক দল ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করে। শুক্রবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) গোয়েন্দা (দক্ষিণ) গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকা থেকে মিজান ওরফে কেটু মিজান ও তার স্ত্রী গোলাপিকে গ্রেফতার করে। হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া আল আমিনকে মহানগরীর বাসন থানা পুলিশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ছাড়া স্বাধীনকে মহানগরীর শিববাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১। সুমনের কাছে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি এবং সুইস গিয়ার পাওয়া গেছে।
র্যাব গাজীপুর পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) কে. এম. এ. মামুন খান চিশতী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্কমর্তা (ওসি) শাহীন খান বলেন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় বাসন থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন নিহত সাংবাদিক তুহিনের বড় ভাই সেলিম। গ্রেফতারকৃতরা সবাই ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। ঘটনার পর রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা স্থানীয়ভাবে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে মহানগরীর চান্দানা চৌরাস্তায় মসজিদ মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ’র গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তুহিন গাজীপুর মহানগরীর পালের মাঠ এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তার দুই ছেলে তৌকির হোসেন তৈকি (৫) ও আবদুল্লাহ আল ফাহিম (৩)। সাংবাদিকতার পাশাপাশি একটি ইউনানী ওষুধ কোম্পানির গাজীপুরের ডিলার ছিলেন।