

ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ২৯০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ভয়াবহ এই বিমান দুর্ঘটনার পর পড়ে থাকা ধ্বংসস্তূপের কোথাও হয়তো মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে রাজস্থানের এক পরিবারের একটি মোবাইল ফোন। হয়তো সেই ফোন আর কখনো খুঁজেও পাওয়া যাবে না। হয়তো এরইমধ্যে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মোবাইল ফোনটি। কিন্তু ওই ফোনে তোলা একটি ছবি (সেলফি) চিরদিন থেকে যাবে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার নিঃশব্দ স্মৃতি হিসেবে।
সেলফিটি তিন সন্তানসহ ডা. কোমি ভ্যাশ ও ডা. প্রতীক জোশি দম্পতির। দুর্ঘটনায় ৫ জনেরই মৃত্যু হয়েছে।
ভারতের উদয়পুরের একটি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক কোমি ভ্যাশ চাকরি ছেড়ে স্বামী ডা. প্রতীক জোশির সঙ্গে লন্ডনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিন সন্তানসহ এই উড়োজাহাজেই তারা লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। বিধ্বস্ত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে উড়োজাহাজটির ভেতরে তোলা সেলফিতে দেখা যায়— ডা. জোশি নিজে ছবি তুলেছেন, পাশে বসে আছেন তার স্ত্রী কোমি। দুজনেই হাসিমুখে। আরেক সারিতে বসে আছে তাদের যমজ দুই ছেলে নকুল ও প্রদ্যুৎ (৫) এবং মেয়ে মিরায়া (৮)। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ছেলে-মেয়েরা হাসছে প্রাণখুলে। এই ছবিই তাদের জীবনের শেষ ছবি হবে, তা কে জানত।
এই দম্পতির ঘনিষ্ঠজনরা সংবাদমাধ্যমকে জানান, ডা. কোমি ভ্যাশ এবং ডা. প্রতীক জোশি দুজনেই আগে উদয়পুরের প্যাসিফিক হাসপাতালে কাজ করতেন। প্রতীক কিছুদিন আগে লন্ডনে চলে যান। সম্প্রতি স্ত্রী ও সন্তানদের লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজস্থানের বানসওয়ারাতে ফিরে আসেন। পরিবারের অনেকেই তাদের বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন।
প্যাসিফিক হাসপাতালের এক মুখপাত্র জানান, লন্ডনে স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য সম্প্রতি চাকরি ছেড়েছিলেন ডা. কোমি। ডা. প্রতীকের বাবা শহরের একজন খ্যাতনামা রেডিওলজিস্ট। আর ডা. কোমির বাবা ছিলেন রাজ্য সরকারের গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা।
ডা. কোমির ভাই প্রবুদ্ধ বলেন, কোমি ও প্রতীকে বিয়ে হয় প্রায় ১০ বছর আগে। প্রতীকের এক বোন আছেন, তিনি পেশায় প্রকৌশলী।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ জুন) স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার পরপরই দুর্ঘটনায় পড়ে। উড়োজাহাজে ২৩২ জন যাত্রী ও ১০ জন ক্রু ছিলেন। তাদের মধ্যে কেবল একজনের বেঁচে যাওয়ার তথ্য মিলেছে। ৮২৫ ফুট ওপর থেকে বিমানটি আছড়ে পড়ে একটি মেডিকেল কলেজের ভবনের ওপর। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পাঁচ শিক্ষার্থীও প্রাণ হারান।