
রুশাইদ আহমেদঃ অমূল্য জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, পবিত্র আর অমায়িক স্নেহ—সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু যে পেশা হয়ে ওঠে, তা হলো শিক্ষকতা। একজন শিক্ষক শুধু একজন শিক্ষকই নন; একজন শিক্ষার্থীর সার্বক্ষণিক বন্ধুবৎসল অভিভাবকও তিনি। গোটা বিশ্বের অগণিত শিক্ষকদের প্রজ্ঞাপূর্ণ প্রভাষণ, প্রেরণাদায়ক আলাপন, গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা কত সহস্র শিক্ষার্থীর জীবনকে বদলে দিয়েছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
এই সম্মানিত শিক্ষক সমাজের অধিকার এবং কল্যাণ নিশ্চিতে ১৯৯৪ সাল হতে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবারও পালিত হলো বিশ্ব শিক্ষক দিবস সোমবার। এ উপলক্ষে শিক্ষকদেরকে নিয়ে বাংলাদেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন, তা এবার শোনার পালা।
সবার জীবনেই থাকে শিক্ষক নিয়ে অবিস্মরণীয় স্মৃতি
খো. রিয়াসাত ইসলাম অমিয়। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে পড়াশোনা করছেন। শিক্ষকদেরকে নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সবার জীবনেই শিক্ষক নিয়ে থাকে কিছু স্মরণীয় গল্প ও অবিস্মরণীয় স্মৃতি। যখন আমি কিন্ডারগার্টেনেও ভর্তি হইনি, তখনই আমার প্রথম শিক্ষক ছিলেন আমার মা। তাঁর হাত ধরেই আমি অক্ষরের সঙ্গে পরিচিত হই। তাঁর মুখে শোনা গল্প, ছড়া আর মমতাময় স্নেহভরা শিক্ষা আজও আমার হৃদয়ে গভীরভাবে গেঁথে আছে।
অমিয় আরও বলেন, শুধু আমার মা-ই নন, জীবনের পথে যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমার শিক্ষাজীবনকে গড়ে তুলেছেন, তাঁদের প্রতিও আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। বিশ্ব শিক্ষক দিবসের এই বিশেষ দিনে সকল শিক্ষককে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা, যাঁদের জ্ঞান, প্রেরণা ও ভালোবাসা আমাদের জীবনকে আলোকিত করে তুলেছে।
জ্ঞানের পাশাপাশি মূল্যবোধ ও মানবিকতার প্রচারক শিক্ষকরা
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না শিরিন বলেন, শিক্ষকরা সমাজের সবচেয়ে আলোকিত মানুষ। তাঁরা শুধু শ্রেণিকক্ষে আমাদেরকে জ্ঞান দেন না। পাশাপাশি, আমাদের জীবনের কল্যাণকর মূল্যবোধ ও মানবিকতার পাঠের প্রচার সাধনেও তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
শিরিন দাবি করেন, একজন ভালো শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর শুধু শিক্ষাজীবনই নয়, পুরো জীবন বদলে দিতে পারেন। তাঁর মতে, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় আমরা সাহস পাই, নিজের প্রতি বিশ্বাস জন্মায়। তাঁদের পরিশ্রম ও নিষ্ঠাই আমাদের আলোকিত ভবিষ্যতের ভিত্তি। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে প্রতিটি শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তিনি।
শিক্ষার মেরুদণ্ড শিক্ষকরা
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মনে করেন, শিক্ষককে একটি জাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। কেননা, শিক্ষা যদি হয় একটি জাতির মেরুদণ্ড, তাহলে শিক্ষার মেরুদণ্ড হলেন শিক্ষকরা।
মেহেদী শিক্ষকদেরকে মোমবাতির সঙ্গে তুলনা করে বলেন, একটা উজ্জ্বল মোমবাতি যেমন নিজেকে জ্বালিয়ে অন্যকে আলোকিত করে, তেমনি একজন শিক্ষক নিজেকে প্রতিটা সময় জ্ঞান অর্জনে নিয়োজিত রাখেন। পরে সেই কষ্টার্জিত জ্ঞান সবার মাঝে বিলিয়ে জাতিকে আলোকিত করেন। শিক্ষক দিবস উপলক্ষে নিজের সকল সম্মানিত শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদনও করেন মেহেদী।
চিন্তা করতে, প্রশ্ন করতে, মানুষ হতে শেখান শিক্ষক
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী জহির রায়হান। তিনি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে লোকপ্রশাসন বিভাগে পড়াশোনা করছেন।
শিক্ষকদের নিয়ে জহির বলেন, শিক্ষকতা শুধু একটা পেশা নয়। এটা একটা দায়িত্ব, একটা অঙ্গীকার, একটা প্রতিশ্রুতি। অন্ধকার থেকে আলোর পথে একজন পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় থাকা ব্যক্তিই হলেন শিক্ষক।
তিনি বলেন, ছোটবেলায় আমরা যেভাবে মাটিতে প্রথম পা ফেলে চলতে শিখি; তেমনি আমাদের চিন্তা করতে, প্রশ্ন করতে, এবং সবচেয়ে বড় কথা—মানুষ হতে শেখান যাঁরা, তাঁরা হলেন আমাদের শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের পেশাগত জীবন আর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষকরা সবচেয়ে ত্যাগ স্বীকার করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
চাইলে পৃথিবী বদলাতে পারেন শিক্ষকরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম জেবা শিক্ষকদের নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন, শিক্ষকরা সকলে এক হন না। কেউ কিছুটা মানসিক ট্রমার মতো, আবার কেউ প্রেরণার বাতিঘর। বিশেষ করে স্কুল থেকে আমার এ অভিজ্ঞতা হয়েছে, যেহেতু সেখানে আমার আট বছর কেটেছে।
তিনি বলেন, তারপরও শিক্ষকরা আমাদের পৃথিবীতে বদল আনতে পারেন, যদি তাঁরা নৈতিকতা আর পেশাদারিত্বের ওপর অটল থাকেন। সততার ওপর নির্ভর করে আমাদেরকে পথনির্দেশ করেন।
শিক্ষকরা আমাদের দুনিয়া দেখার চোখ তৈরি করেন
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কানিজ ফাদিলা বলেন, শিক্ষকরা আমরা কীভাবে দুনিয়া দেখব, সেই দুনিয়া দেখার চোখ তৈরি করেন এবং আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ পথ খুঁজে পেতে সহায়তা করেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই সে সব শিক্ষকদের, যাদের প্রেরণায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের মূল্যায়িত করতে শেখে, নিজেদের আগ্রহগুলো আবিষ্কার করতে শেখে এবং বুঝতে শেখে যে ভালো ফলই সব নয়। এ সব শিক্ষককে জানাই শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা!
সদ্য শিক্ষক হওয়া শাওনের অনুভূতি
জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন নীলফামারীর সন্তান সাদ্দাম বিন আউশ-শাওন। চলতি বছরের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একই বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দিয়েছেন রংপুরের মাহীগঞ্জ কলেজে।
সদ্য শিক্ষক হওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে শাওন বলেন, শিক্ষক হতে পারার বিষয়ে আমার অনেক আবেগ কাজ করে। পরিবারের সকলে শিক্ষক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার আব্বা-আম্মাও শিক্ষক। এখন আমিও হয়েছি। এতে অনেক সম্মান, পরিচিতি আছে। ভালোবাসা আছে। পাশাপাশি, মানুষের মাঝে নিজের ক্ষুদ্র জ্ঞান ছড়ানোর আনন্দ আলাদা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।






















