• আজ ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোলায় যখন জেলা ছাত্রলীগ নেতা ক্ষমতাশীল এক নেতার নির্দেশে কারাগারে বার বার বন্দী ছিল

| নিউজ রুম এডিটর ৪:৫৬ অপরাহ্ণ | জানুয়ারি ২৩, ২০২২ রাজনীতি, সারাদেশ

মোঃ ফরিদুল ইসলাম:ভোলার সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক, মোস্তাক আহমেদ শাহীন গত ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ড.আশিকুর রহমান শান্ত সাথে দেখা করে ঢাকা থেকে ভোলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় তাসরিফ লঞ্চে মোস্তাক আহমেদ শাহীন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১২ টার দিকে (১১ডিসেম্বর) ঢাকা থেকে দৌলতখান গামী তাসরিফ লঞ্চটি ইলিশা ঘাট করার পর তাকে তার সহকর্মীরা আনতে যাওয়া নির্দিষ্ট মাইক্রোবাসে চেপে কয়েকজন বন্ধু সহযাত্রী সহ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। মোস্তাক আহমেদ শাহীন আরও বলেন আমার সাথে লঞ্চের সহযাত্রী আবহাওয়া অফিস রোডের বাসিন্দা জনৈক ছোট ভাইকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে নজরুল স্মৃতি সংসদের, ভোলা সঃ বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপরীতে সামনে থেকে ভোলা থানার পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করে আমাকে, ৪ বছর পুর্বের (২০১৩ সালের) ষড়যন্ত্র মুলক মিথ্যা মামলায়। ১ রাত থানা হাজতে থেকে তারপর দিন আদালত হয়ে ভোলা কারাগারে পৌঁছলাম।

মোস্তাক আহমেদ শাহীন আরও বলেন শুরু হলো আমার দুঃসহ হাজতী জীবন। রাজনৈতিক কর্মী হবার কারনে জীবনে বহুবার কারাবন্দী হয়েছি বটে। তবে নিজ দলীয় ক্ষমতাসীন নেতার ক্ষমতার দাপটে কারাগারে যে রকম অমানবিক মানবেতর বন্দী জীবন কাটিয়েছি তেমনটা কাটাইনি জাতীয়পার্টি, ৪ দলীয় জোট, কিংবা ১/১১ এর অসাংবিধানিক সরকারের আমল গুলোতেও।

বন্দী জীবনের দু’মাস হতে চললো জেলা ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ শাহীনের। শুরু হলো হাঁড় কাপানো শৈত্য প্রবাহ তার উপর। ছাত্রলীগ নেতা বলেন আমার সাথে ঠিক মতো দেখা সাক্ষাত করতে পারছেনা স্ত্রী, সন্তানসহ নিকটাত্মীয়রা। মোস্তাক শাহীন বলেন প্রবল চাঁপে কারা কর্তৃপক্ষ আমার আপনজনদের দেখা সাক্ষাতের পারমিশন দিচ্ছেনা। সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা বলেন প্রতিদিন আমার স্ত্রী গিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকতো কারাগারের সম্মুখে। সপ্তাহে ২/১ দিন যদিও ২/৪ মিনিট কথা বলার সুযোগ পেতো সেখানেও ডিবি পুলিশ পাশে দাড়িয়ে থাকতো। সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা কে দেখতে দুর দুরান্তের চেনা অচেনা বহু মানুষের ভীড় জমে যেতো কারা ফটকে। ক্ষমতাধর নেতার নির্দেশে ডিবি পুলিশ সাধারন মানুষকে কারাফটক থেকে চলে যেতে হুমকির পাশাপাশি ক্যামেরায় ছবি তুলতে শুরু করলো। মান সম্মানের ভয়ে আমাকে দেখতে না পারার মনোকষ্ট নিয়ে সাধারন মানুষ ফিরে যেতে বাধ্য হতো।

৪টি মামলার আসামী করে সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ শাহীন কে জেলবন্দী করার পর এবার শুরু হলো অন্য রকম টর্চার। একেক করে মামলা গুলোর জামিন হতে লাগলো, আর নুতন নুতন মামলায় শ্যোন এ্যারেষ্ট দেখিয়ে তাকে বন্দী জীবন দীর্ঘায়িত করা শুরু করলো পাষন্ড, ক্ষমতাসীন নেতা। ওপেনহার্ট সার্জারীর প্যাশেন্ট জেলা ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ শাহীন, আইনানুযায়ী কারা হসপিটালে থাকার কথা থাকলেও ওই নির্দয় এক নায়কের হিটলারী চাঁপে তাকে সে সুযোগ প্রদান করতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ। প্রচন্ড শীতের মধ্যে সাধারণ কয়েদীদের সাথে ফ্লোরিং করে ঘুমাতে গিয়ে ঠান্ডাজনিত কারনে আমি মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়লে (এ সময় কারাভ্যন্তরে সাধারন বন্দীরা আমার চিকিৎসার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেল কর্তৃপক্ষকে চাঁপ দেয়) কারা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় আমাকে কারা হাসপাতালে এ্যাডমিট করতে।

তিনি আরও বলেন কারা চিকিৎসক আমাকে রাতে ভাতের পরিবর্তে রুটি খেতে বলে। আমি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসকের পরামর্শ জানালেও তারা আমাকে রুটি সরবরাহ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। তাদের সাফ জবাব, “শাহিন ভাই যেভাবে আছেন থাকেন। আপনি মরে গেলেও বাহিরে মেডিকেলে নেবার পারমিশন নাই। আমাদের চাকরি থাকবেনা। তখন আমি নির্বাক চিত্তে স্মিত হাসি মুখে সেদিন সব মেনে নিয়েছি। দীর্ঘ ৩ মাস পর আমার জামিন হয়। আমি মুক্ত মানুষ হিসেবে বের হবার মানুষের কারাফটকে আসলে কিন্তু মুক্তি মিলেনি। তজুমুদ্দিনের একটি ডাকাতি মামলায় পুনরায় শ্যোণ এ্যারেষ্ট দেখিয়ে আবারো কারাবন্দী করে ক্ষমতাসীন এক ব্যক্তি।

প্রায় পৌনে ৪ মাস কারাবন্দী থাকার পর মাননীয় উচ্চাদালতের নির্দেশে মুক্তি পাই। এরপরেও ২০১৮,২০১৯,২০২০,২০২১ এই ৪ বছরে আরো ৬ বার সহ সর্বমোট ৭ বার কারান্তরীন করা হয়েছে আমাকে। তিনি আরও বলেন ২টি মিথ্যা মামলার ১টিতে ৫ বছর অপরটিতে ২ বছর ফরমায়েশী সাজা প্রদান করে, এতো মামলা, জেল,জুলুম, হুলিয়া, কারা নির্যাতনের পরেও আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের পাশাপাশি ভোলার সাধারন মানুষের (দলমত নির্বিশেষে) বুক ভরা ভালোবাসা ও দোয়ায় আমি বারংবার বীরের বেশে উচ্চ শিরে ফিরে এসেছি অন্ধকার থেকে আলোয়।

নির্মম নির্যাতিত জেলা ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ শাহীন আরও বলেন প্রতিরোধ প্রতিবাদে উচ্চকন্ঠ থেকেছি তথাকথিত স্বৈরশাসক ও তার রক্তচোষা আত্মীয় স্বজনদের অনিয়ম, দুর্নীতি, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে। আমার এই সাহস ও প্রানশক্তির পেছনের উৎস আওয়ামীলীগের বঞ্চিত নেতা কর্মী আর শোষনের শিকার ভোলার মানুষেরা।

নির্যাতিত জেলা ছাত্রলীগ সাবেক নেতা মোস্তাক আহমেদ শাহীন বলেন ১৮ কোটি জনগণের অভিভাবক মাননীয় শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য জুলুম-নির্যাতন কারীদের বিরুদ্ধে যতোদিন বাঁচবো ওই রক্তচোষা হায়েনা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করেই যাবো ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন আপনাদের অকুন্ঠ সমর্থন ও নিঃস্বার্থ ভালবাসাই লুটেরাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধের রসদ।