আজিজুল ইসলাম বারী, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে লালমনিরহাট পৌরসভা এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হওয়া সেই নবজাতক কন্যাশিশুর ঠাঁই হলো রাজশাহীর শিশুমণি নিবাসে।
দীর্ঘ ৮ দিন চিকিৎসার পর আদালতের নির্দেশে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর শিশুমণি নিবাসে শিশুটিকে প্রেরণের বিষয়টি জেলা পুলিশ নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ শিশুটিকে তাদের তত্ত্বাবধানে রেখে আদালতের আদেশে রাজশাহীর শিশুমণি নিবাসে প্রেরণ করেন।
এদিকে শিশুটি উদ্ধারের পর থেকে তাকে দত্তক নিতে প্রতিদিন লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে শত শত ফোন এসেছে। এ ছাড়া ওই কন্যাশিশুটিকে দেখতে ও দত্তক নিতে হাসপাতালে ভিড় করেছেন শতাধিক মানুষ। এ জন্য শিশুটির নিরাপত্তায় হাসপাতালের ওই কেবিনের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। উদ্ধার হওয়া নবজাতক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন পুলিশ সুপারের নির্দেশে নারী পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক হাসপাতালে থেকে নবজাতক কন্যাশিশুটিকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি মাতৃস্নেহে সেবাযত্ন করেছেন। শিশুটির সন্ধান পাওয়ার পর থেকেই নারী পুলিশ সদস্যরা হাসপাতালে তার দেখাশোনা করছিলেন ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কোনো শিশুকে পাওয়া গেলে তাদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলার পর রাজশাহীর শিশুমনি নিবাসে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখান থেকে শিশুদের দত্তক নিতে আগ্রহী দম্পতিরা পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। কোনো শিশুকে দত্তক নিতে একাধিক আবেদন জমা পড়লে আদালত তাদের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে দম্পতি নির্বাচন করেন এবং সেই দম্পতির হাতে শিশুটিকে হস্তান্তর করেন। লালমনিরহাটে উদ্ধার হওয়া শিশুটির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম অনুসরণ করা হবে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নেওয়াজ মোরশেদ জানান, শিশুটিকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পর নিয়মানুযায়ী তাকে আদালতের নির্দেশে গতকাল বুধবার রাজশাহীর শিশু নিবাসে পাঠানো হয়েছে।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, উদ্ধার হওয়া নবজাতক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ আমাদের নারী পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক হাসপাতালে থেকে নবজাতক কন্যা শিশুটিকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। পাশাপাশি শিশুটিকে মাতৃস্নেহে সেবাযত্নও করেছেন। সেখানে ৮ দিন থাকার পর আদালতের নির্দেশে রাজশাহীর শিশুমণি নিবাসে পাঠানো হলো।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সকালে সদর থানার এসআই রফিকুল ইসলাম জেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন কালীবাড়ি (পুরান বাজার) এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে নবজাতক শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর তিনি থানায় একটি লিখিত এজাহার দেন। পরে ধারা-১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ৩০৭/৩১৭ রুজু করে থানা পুলিশ। তারই পেক্ষিতে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আদালত শিশুটিকে শিশুমণি নিবাসে প্রেরণের নির্দেশ দেন।