আবুল কাশেম রুমন,সিলেট: সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা বিশ্বনাথ। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ওই উপজেলার কর্ণদার ছিলেন বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী। তৎকালিন সময়ে এলাকায় উন্নয়নে তার নাম ছিলো শীর্ষে। যা আজও সাধারণ মানুষের মনি কোটায় স্থান করে রেখেছেন। ইলিয়াস আলী নিখোজের পর থেকে সেই উপজেলার সাধারণ মানুষ তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া দেখতে পায়নি বলে অভিযোগ।
দীর্ঘ একযুগ ধরে সরকারি দলের কোন এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান না থাকায় দীর্ঘ দিন থেকে উন্নয়ন বঞ্চিত এই প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলা। তৎকালীন সময়ে এই উপজেলার আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও ভোট দিয়েছিলেন মহাজোটের মনোনীত প্রার্থীকে। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়া।
সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনীত গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খান। ফলে সরকার দলের আর কোনো সংসদ সদস্য পেল না বিশ্বনাথবাসী।
কিন্তু উন্নয়ন বঞ্চিত বিশ্বনাথবাসীর আশার জাগে ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠা এসএম নুনু মিয়া। পরবর্তীতে একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইলিয়াস ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে মাত্র তিন দিনের প্রচারণায় এমপি নির্বাচিত হন গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান। নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তিনি ভুলে যান ইলিয়াস পরিবারকে। নির্বাচিত হওয়ার চারমাস পর তিনি শপথ গ্রহণ করেন।
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কখনো বিএনপির একাংশ ও কখনো আওয়ামী লীগের একাংশকে হাতে নিয়ে তিনি মাঠে নামেন। নির্বাচিত হওয়ার দীর্ঘ দেড় বছর পর হঠাৎ ২০২০ সালের ১০ আগস্ট উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যোগদানকে ঘিরে সূত্রপাত হয় এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব। এরপর থেকে দু’পক্ষের মধ্যে হামলা-মামলা চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর বিশ^নাথ উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পর নামে ৩৯ কোটি ৬লাখ ৫৮ টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দ আনেন উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া।
ওই বরাদ্দ পেয়ে ২০২১ সালের ৫ডিসেম্বর তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে উপজেলা বিআরডিবি মিলনায়তনে সংবাদ-সম্মেলনও করেন। এরপর ২০২১সালের ২৩ ডিসেম্বর ওই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম এনে উপজেলা চেয়ারম্যান নুন মিয়ার বিরুদ্ধে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন এমপি মোকাব্বির খান।
আর ওই অভিযোগটি ২২ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন তদন্ত করেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ইমরুল হাসান।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, এমপি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা একটি অভিযোগ দিয়েছেন। ওই প্রকল্পটি এখনও টেন্ডারও হয়নি বলেও জানান তিনি।
তবে, এমপি মোকাব্বির খান গণমাধ্যমকে জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান নুনু মিয়া মানুষের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছেন এর যতেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে। অনেকে তথ্য প্রমাণসহ তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন এবং আরও করা হবে।
এদিকে, এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের এই দ্বন্দ্বে উপজেলাবাসী উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিশ্বনাথ উপজেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম খায়ের বলেন, উপজেলাবাসী এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েছেন। এমনকি উপজেলার শতাধিক রাস্তা যাতায়াত অনুপোযোগী। সে দিকে নজর না দিয়ে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বে যদি এই প্রকল্পও বাধাগ্রস্থ হয় তাহলে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবে উপজেলাবাসী।