সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে ফলাফল নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হয়নি। নির্বাচনে সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান।
সুপ্রিম কোর্ট বারের দক্ষিণ হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সন্মেলনে সমন্বয় পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা সম্পাদক পদে ভোট কারচুপি ও বাতিল হওয়া ভোট কাজলের পক্ষে গণনা করার অভিযোগ আনেন।
এদিকে নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত উপ-কমিটির প্রধান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এওয়াই মশিউজ্জামান তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এর আগেই পদত্যাগ করলেন মশিউজ্জামান। শনিবার নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত উপ-কমিটির একাধিক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল যুগান্তরকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে অভিমান করে তিনি পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। আমি এটাকে পদত্যাগপত্র বলব না। আশা করছি, দুই-একদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে মিটিং করে তিনি অসমাপ্ত কাজ শেষ করবেন।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হয়। গণনা শেষে দেখা যায়, সভাপতিসহ ৬টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল ও সম্পাদকসহ ৮টি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল বিজয়ের পথে। সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে অল্প ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার প্রস্তুতি নিলে সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার দাবি তোলেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। তারা সম্পাদক পদে ভোট কারচুপি ও বাতিল হওয়া ভোট কাজলের পক্ষে গণনা করার অভিযোগে আনেন।
নির্বাচন কমিশনের প্রধান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এওয়াই মশিউজ্জামান অভিযোগ নাকচ করে ফলাফল ঘোষণা করতে অনড় থাকলে মিছিল, শ্লোগান, হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ব্যাপক হৈ চৈ শুরু করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সম্পাদক প্রার্থী আব্দুন নূর দুলাল লিখিতভাবে ভোট পুনরায় গণনার আবেদন করেন। আবেদন গ্রহণ না করলে নির্বাচন কমিশনের প্রধান এওয়াই মশিউজ্জামানকে পদত্যাগ করতে বলেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। তার পদত্যাগের দাবিতে শ্লোগান দেওয়া হয়।
উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত কমিটির প্রধান এওয়াই মশিউজ্জামান সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার আবেদন নেন ও ভোটের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করেন। ওই সময় তিনি জানান, শুক্রবার (১৮ মার্চ) বিকাল ৩টায় দুই সম্পাদক প্রার্থীর উপস্থিতিতে ভোট পুনরায় গণনার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু শুক্রবার এওয়াই মশিউজ্জামান সুপ্রিম কোর্ট বারে আসেননি। এ কারণে ভোট পুনঃগণনার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৫ হাজার ৯৮২ জন আইনজীবী ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বৃহস্পতিবার ১৮ মার্চ বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত চলে ভোট গণনা।
নির্বাচনী সাব কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতিসহ ৬টি পদে আওয়ামী লীগের সাদা প্যানেল ও সম্পাদকসহ ৮টি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন। সভাপতি পদে সাদা প্যানেলের অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এগিয়ে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল থেকে এগিয়ে থাকা অন্য ৫ জন হলেন- সহসভাপতি পদে মো. শহীদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন, সদস্য পদে ফাতেমা বেগম, সাহাদত হোসাইন রাজিব ও সুব্রত কুমার কুন্ডু।
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে এগিয়ে থাকা অন্য ৭ জন হলেন- সহসম্পাদক পদে মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মাহবুবুর রহমান খান, ট্রেজারার মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সদস্য ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী, গোলাম আক্তার জাকির, মো. মনজুরুল আলম সুজন ও কামরুল ইসলাম।