মহান আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আবার এ পৃথিবী তিনিই ধ্বংস করবেন। নশ্বর পৃথিবী যেমনি ক্ষণস্থায়ী তেমনি এর প্রতিটি জিনিসও ক্ষণস্থায়ী বা ধ্বংস হয়ে যাবে। আর ধ্বংস হওয়ার পূর্বে সেটি দুর্বল হওয়ার আলামতগুলো প্রকাশ পাবে। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীকে ধ্বংস করার পূর্বে কিছু আলামত প্রকাশ করবেন। কেননা নশ্বর পৃথিবীতে কোনো কিছুই অবিনশ্বর নয়। একদিন কোনো না কোনো ভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে কি মনে প্রশ্ন হয় না যে, হঠাৎ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে?
এর উত্তর খোঁজ করার জন্য চলুন কুরআন ও রাসুল সঃ এর হাদীস জেনে আসি।
কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
فَهَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَن تَأْتِيَهُم بَغْتَةً فَقَدْ جَاء أَشْرَاطُهَا فَأَنَّى لَهُمْ إِذَا جَاءتْهُمْ ذِكْرَاهُمْ
‘তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, কেয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। বস্তুতঃ কেয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কেয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?’ (সূরা : মুহাম্মাদ, আয়াত : ১৮)।
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। এর মধ্যে একটি ছিল- কিয়ামতের সর্ব প্রথম আলামত কি?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে প্রথম আলামত হলো পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে মানুষকে একত্রকারী আগুন। (সহিহুল বুখারি)
উল্লেখ্য, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্র হাদীসে আগুনের নির্গমনকে কিয়ামতের প্রথম আলামত বলে উল্লেখ করেছেন।
রাসুল সঃ এর মুখনিঃসৃত অত্র হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, কিয়ামতের সময় ঘনিয়ে আসলে সর্ব প্রথম যে বড় আলামতটি প্রকাশ পাবে, তা হলো- আগুন নির্গমন। ইহা বড় ধরনের আগুন। এ আগুন ইয়ামেনের পূর্ব দিকের এডেন নগরী থেকে বের হবে। ইহা কিয়ামতের বড় আলামতগুলোর মধ্যে সর্বশেষ এবং কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য সর্ব প্রথম নিদর্শন। আগুন ইয়ামেন থেকে বের হয়ে জমিনে ছড়িয়ে পড়বে এবং মানুষকে হাশরের ময়দান শামের (সিরিয়া) দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে।আল্লাহ তাআলা আগুন ব্যবহার করেই কিয়ামতের ময়দানে মানুষকে হাকিয়ে নিয়ে যাবে।
আগুন নিয়ে পবিত্র কুরআন কারিমের সূরা নিসার ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاٰیٰتِنَا سَوۡفَ نُصۡلِیۡهِمۡ نَارًا ؕ کُلَّمَا نَضِجَتۡ جُلُوۡدُهُمۡ بَدَّلۡنٰهُمۡ جُلُوۡدًا غَیۡرَهَا لِیَذُوۡقُوا الۡعَذَابَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَزِیۡزًا حَکِیۡمًا
নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাব আগুনে। যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে তখনই আমি তাদেরকে পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে যাতে তারা আস্বাদন করে আযাব। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
সহিহুল বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তিন পন্থায় মানুষকে একত্রিত করা হবে।
১. কিছু মানুষ স্বেচ্ছায়।
২. কিছু মানুষ অনিচ্ছায়।
৩. বাকিদেরকে আগুন দ্বারা।
তারা যখন দিবানিদ্রা করবে তখন আগুনও তাই করবে, যখন তারা রাত্রিযাপন করবে তখন আগুনও তাদের সাথে রাত্রিযাপন করবে। আগুন তাদের সাথেই প্রভাত করবে এবং তাদের সাথেই সন্ধ্যা করবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আগুনে পুড়ে মরা ব্যক্তিকে শহীদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। পবিত্র হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে জাবের তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর বাবা জাবের (রা.)-কে তাঁর রোগশয্যায় দেখতে গেলেন। তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। তখন মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১১)
সুবহানাল্লাহ, মহান আল্লাহ কত দয়ালু। মানুষের মৃত্যু অবধারিত। যখন সময় আসবে, তখন তাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। সময়ের একমুহূর্ত আগেও কেউ তাকে মারতে পারবে না। তবে কারো মৃত্যু যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা বা কঠিন রোগে হয়, মহান আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে শাহাদাতের মতো অতি সম্মানের মর্যাদা দিয়ে দেন। উল্লিখিত হাদিসটি ইবনে মাজাহ শরিফে এসেছে এভাবে—জাবের বিন আতিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী (সা.) তাঁকে দেখতে আসেন। জাবের (রা.)-এর পরিবারের কেউ কেউ বলল, আমরা আশা করতাম যে সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাহলে আমার উম্মতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারিতে নিহত হলে শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয় রোগে মৃত্যুবরণকারীও শহীদ। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮০৩)
মহান আল্লাহ আমাদের দৈনন্দিনে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের শহীদি মর্যাদা দান করুন। তাদের পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য্য ধারণের তাওফিক দান করুন এবং তাদের উত্তম প্রতিদান করুন।
পরিশেষে, কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়া বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে যেসব আলামত বর্ণনা কর হয়েছে, সেসব আলামত প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালার প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও তাওবা করতে হবে।আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর রহমত লাভ করে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের সফলতার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহকে কেয়ামতের সব আলামত ও তার ভয়াবহতা থেকে হেফাজত করুন। ঈমান ও নেক আমলের ওপর জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক
মোঃ মোবারক হোসাইন
কবি, লেখক ও গল্পকার।