• আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিস্তা চরে নিরক্ষরতা দূরীকরণে শিক্ষার আলো ছড়াবে তারা

| নিউজ রুম এডিটর ৭:৩৮ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩ সারাদেশ

আজিজুল ইসলাম বারী,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা তিস্তা চর এলাকায় গিয়ে নিরক্ষর মানুষদের তালিকা তৈরি করে স্বাক্ষরতা শেখাতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই কাজে উৎসাহ দিচ্ছেন শিক্ষকরা।

লালমনিরহাট জেলা শিক্ষাখাতে অনেকটা এগিয়ে গেলেও এখনো রয়েছে নিরক্ষরতা। সেই নিরক্ষরতা দূরীকরণে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের তারুণ্য দীপ্ত শিক্ষার্থীরা নিয়েছে ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ। শুধু স্বাক্ষরতাই নয় প্রাথমিক শিক্ষা তথা অক্ষরজ্ঞান প্রদান, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখী করাসহ নানান পরিকল্পনা নিয়েছে তারা।

ক্লাস-পরীক্ষার পাশাপাশি সমাজের বিনির্মানে এখন থেকেই অংশ নিচ্ছে তারা।

উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের স্বাক্ষরতা ও প্রাথমিক শিক্ষা দিতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে তারা। তিস্তার বালু চর পাড়ি দিয়ে, রোদ মাথায় নিয়ে দলবেধে ধুলোবালি মাখা এলাকায় গিয়ে কথা বলে খোশগল্পের মাধ্যমে স্বাক্ষর শেখানো হচ্ছে। তালিকা করে পরবর্তী আবারও যোগাযোগ করে শতভাগ স্বাক্ষরতা পূরণের পরিকল্পনা তাদের।

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে জেলাটিকে নিরক্ষর ঘোষণা করা হলেও দারিদ্র্যতা ও তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা অনেকেই এখনো রয়েছে অক্ষরজ্ঞানহীন। প্রতিবছর ঝড়ে পড়ছে শত শত শিক্ষার্থী। বর্তমানে লালমনিরহাট জেলার শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ। জেলার বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্রতার কারণেন প্রাথমিকে ঝরে পড়ে যাচ্ছে হাজার শিশু।

এদিকে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে ছয়টি ওয়ার্ড ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে পড়েছে। বিলীন এসব এলাকার বাসিন্দারা নদী তীরর কিংবা অন্যত্র স্থান নিয়েছে যাদের অধিকাংশ দরিদ্র শ্রেণির কিংবা খেটে খাওয়া দিনমজুর। এদের অধিকাংশই স্বাক্ষর জানেনা। জরুরী কাজে টিপসই একমাত্র ভরসা।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে টিপসই তুলে দেওয়া হলে জমি দলিল থেকে শুরু করে যে কোন কাজই করতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে এসব লোকের। সেই চিন্তা থেকে ইউনিয়নটিতে স্বাক্ষরতা শেখানো কার্যক্রম শুরু করেছে মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
শিক্ষার্থীরা।

মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
সুত্রে জানা গেছে, গ্রুপ ভিত্তিক উপদলে বিভক্ত হয়ে ধুলোবালি মাড়িয়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে খুজে বের করছে নিরক্ষর মানুষদের। সেখানে খোশগল্প কিংবা নানান উপস্থাপনায় স্বাক্ষর ও প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে হাতে কলমে স্বাক্ষর শেখাচ্ছে তারা। এছাড়াও মোবাইল নম্বরসহ নাম ঠিকানা তালিকা করে পরবর্তীতে দশ/বারোদিন পর আবারও এসে শিখিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন তারা।

ইতিমধ্যে প্রায় দুইশতাধিক লোকের তালিকাও করা হয়েছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সব এলাকার তালিকা করে গ্রুপভিত্তিক নিকটতম শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব দিয়ে প্রাথমিক জ্ঞান ও স্বাক্ষরতা শেখাতে সফল হওয়ার পরিকল্পনা তাদের।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিশাত তাসনীম দিপা বলেন, স্কুলের স্যারদের সহযোগিতায় আমরা তিস্তা চর এলাকার নিরক্ষর মানুষদের খুঁজে বের করে তাদেরকে নাম লেখা শিখছি। এই কাজ গুলো করে আমরাও আনন্দিত।

তত্ত্বাবধায়নকারী শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে খুবই অনুপ্রাণিত। এ কাজে আমরা শিক্ষার্থীদের উৎসব প্রদান করছি। তিস্তার চর বেষ্টিত এলাকায় প্রায় শতাধিক নিরক্ষর মানুষের তালিকা করছি। পর্যাক্রমে তাদের নামের স্বাক্ষর শিখানো হবে। আমরা চাই অত্র এলাকার মানুষ যাতে আর টিপসই ব্যবহার না করে।

মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ সারোয়ার আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা যে কাজটি করছে তা অনেক বেশি প্রশংসনীয়। আমরা চাই এলাকা নিরক্ষর মুক্ত হোক। তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জ্ঞানহীন মানুষদের নাম লিখতে সহযোগিতা করবে। আমরা এই ব্যতিক্রম কাজটি করে যাচ্ছি। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই।

লালমনিরহাট জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল বারী বলেন, বিদ্যালয়টি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভাল উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে দেশে নিরক্ষর মানুষ থাকবে না। পাশাপাশি এমন উদ্যোগের সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান করছি।’