• আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুস্থদের চালে হরিলুট ঠাকুরগাঁওয়ে দরিদ্রদের বরাদ্দকৃত সরকারি চাল আটক

| নিউজ রুম এডিটর ২:৩৫ অপরাহ্ণ | জুন ২৫, ২০২৩ সারাদেশ

মো: রেদওয়ানুল হক মিলন, ঠাকুরগাঁও : ঈদুল আযাহা উপলক্ষে সারাদেশের অংশ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের বেশকয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ ইতোমধ্যে দরিদ্র মানুষদের মাঝে চাল বিতরণ করা শুরু করেছে। তবে প্রত্যেক কার্ড ধারি ব্যক্তিকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও চেয়ারম্যানরা ৭কেজি ৭৩০ গ্রাম থেকে সাড়ে ৮ কেজি চাল কম ও দরিদ্র-অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের কার্ড না দিয়ে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের কার্ড দেওয়ার অভিযোগ তুলেন উপকারভোগীরা। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা ট্যাগ কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

আর ডিজিটাল মেশিনে বা কাটাতে ওজন করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে প্লাস্টিকের বালতিতে করে। কয়েকজনের চাল আবার ডিজিটাল মেশিনে মেপে দেখা গেছে, কোনোটিতে ৭ কেজি ৭৭০ গ্রাম, কোনোটিতে ৮ কেজি ১০০ গ্রাম, সর্বোচ্চ যেটি পাওয়া গেছে সেটির ওজন ৮ কেজি ৬৫০ গ্রাম।

গতকাল শনিবার চাল বিতরণের সময় এমন অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর, আকচা, শুখানপুকুরী,দেবীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে। বুধবার (২১জুন) থেকে শনিবার (২৪জুন) পর্যন্ত সদরের বেশকয়েকটি ইউনিয়নে হত-দরিদ্রদের মাঝে ভিজিএফ’র চাল বিতরণে এ অভিযোগ পাওয়া যায়।

আকচা ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মোতালেবসহ তিনজন মিলে ভিজিএফ’র ৩০কেজি একটি খোলা চালের বস্তা নেন। দোকানে ওজন দিয়েন দেখেন চাল ৩০কেজী নয়, ২৭/২৫কেজি। বাকি চাল উধাও। ওজনে কম দেয়ায় ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে, ওই ইউনিয়নে অস্বচ্ছলদের চালের কার্ড না দিয়ে স্বচ্ছলদের কার্ড দিয়ে ভিজিএফ’র চাল প্রদান করা হয়। স্বচ্ছল ব্যক্তিরা সেই চাল বিক্রি করে দেয়। তবে অভিযোগে বিষয়ে সংশ্লিস্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ কথা বলতে রাজি হয়নি।

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা প্রকৃত গরিব তারা যদি চাল না পায় তাহলে চাল কারা পাচ্ছে? যারা চাল পাচ্ছে তারা অনেকেই তা বিক্রি করে দেয়। বস্তাপ্রতি আধা কেজি চাল কম মানা যায়। কিন্তু ৪ থেকে ৫ কেজি। বাকি চালগুলো কথায় যাচ্ছে? কে খাচ্ছে?। চেয়ারম্যানের কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি তার নিজের টাকায় কিনে চালগুলো দিচ্ছে। তারা আরো বলেন, এতো অভিযোগ তবুও কোন ব্যবস্থা নেয়া না স্থানীয় প্রশাসন। ইউএনওকে অভিযোগ দিলে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে তিনি কোন ব্যবস্থা নেন না।

একই চিত্র সালন্দর ইউনিয়নেও। সেখানে চাল বিতরণের সময় প্রত্যেক কার্ড ধারিকে ২থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ বালতিতে করে চাল দেয়ায় অনেকে সেই চাল পাল্লা দিয়ে ওজন দিয়ে দেখেন প্রতি বালতিতে ২-৩ কেজি কম। এসময় অভিযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে ওই ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, প্রত্যেকজনকে ১০ কেজী করে চাল দেওয়া হচ্ছে। আর সংশ্লিস্ট চেয়ারম্যান ফজলে এলাহী মুকুট চৌধুরী স্বীকার করেন ওজনে কম দেয়ার কথা।

একই ইউনিয়নের এক বাসিন্দার ব্যাগের ওজন করে দেখা গেছে ৮ কেজি ১৭০ গ্রাম। তিনি জানান, ভেতরে ওজন মাপার কোনো যন্ত্র নেই। চাল দেয়া হচ্ছে প্লাস্টিকের বালতিতে করে। অনুমানে যতটুকু হয় সেটুকু দিচ্ছেন। কম-বেশি নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগই নেই। আরেক ব্যাক্তি বলেন, ‘সরকার আমাদের জন্য ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে। আর তারা আট কেজি করে চাল দিচ্ছে। আমরা দুই কেজি করে চাল কম নেব কেন? আমাদের ১০ কেজি করে চাল বুঝিয়ে দিক।

অন্যদিকে গতকাল সদরের শুখানপুখুরি ইউনিয়নে দেখা গেছে, ১৩ বস্তা চাল বের করে অনন্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এসময় গ্রামপুলিশ ও স্থানীয়রা তা আটক করে। তবে আটককৃত চালগুলো নাকি চেয়ারম্যানের লোকজনের। এমন দাবি চাল নিয়ে যাওয়া ব্যক্তির। পরে সেই চালের বস্তাগুলো ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়।

সংশ্লিস্ট ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান উপস্থিত না থাকায় দায়িত্বে থাকায় প্যানেল চেয়ারম্যান আমজাদ আলী জানান, চাল ফেরত আনা হয়েছে তা আবারও বিতরণ করা হবে। এমন অনিয়ম হলেও সেখানে পাওয়া যায়নি প্রশাসনের কাউকে।

তবে সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামান জানান, সু নির্দিস্ট অভিযোগের প্রমাণ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।