সরকার পতনের হুঙ্কার দিয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ভোট চুরির জন্য সরকার যত প্রকল্প নিয়েছে সব নসাৎ করে দেওয়া হবে। যারা এ ভোট চুরির সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ করেছি শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য। কিন্তু গত ১৫ বছরে তা হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। বিনাভোটে সরকার দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করেই যাচ্ছে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে চুরি করে শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু সেটা আর হতে দেওয়া হবে না। বক্তব্য একটাই শেখ হাসিনার পতন। এক দফার মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে।
বুধবার দুপুর ২টার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনের সড়কে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন বিএনপি নেতারা।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনের সড়কে এই সমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের মানুষ একটি ঘোষণা শুনতে চায়। সেটির অপেক্ষা রয়েছেন সবাই, যা আমাদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব দেবেন। শেখ হাসিনা পাবলিকের সেন্টিমেন্ট বুঝেই ভোট চুরিতে নেমেছেন। দিনের ভোট রাতে চুরি করেছেন। বিগত নির্বাচনের মতো ভোট চুরি করতে ইতোমধ্যে ডিসিদের পরিবর্তন এবং ওএসডি করছেন।’
তিনি বলেন, ‘ভোট চুরির জন্য যত প্রকল্প নিয়েছেন সব নসাৎ করে দেওয়া হবে। যারা এ ভোট চুরির সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে চুরি করে শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু সেটা আর হতে দেওয়া হবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করেছি শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য। কিন্তু গত পনের বছরে তা হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করে তারা বাকশাল কায়েম করেছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ভোটের অধিকার হরণ করেছে। দেশের মানুষের সততাকে শেষ করে দিয়েছে। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনব।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘বিনাভোটে সরকার নির্বাচন করে দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করেই যাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর মামলা, হামলা, সাজা দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার ভোট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু দেশের জনগণ তা হতে দেবে না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, ‘দিনের ভোট রাতে করে এবং ভোট চুরি করে ক্ষমতায় বসে আছে বর্তমান সরকার। এক দফার মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে।’
আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বক্তব্য একটাই শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্রের ধারা আনা হবে।’
ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘কথা একটাই, আপনাকে যেতে হবে। ভারত ম্যাসেজ দিয়েছে তারা আপনার সঙ্গে নাই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপনার সঙ্গে নাই। আমেরিকা আপনার সঙ্গে নাই। আপনার সঙ্গে কেউ নাই। নিজে ক্ষমতা থেকে নামবেন? নাকি আমরা নামানোর দিনক্ষণ ঠিক করব। আপনার (শেখ হাসিনা) অধীনে নির্বাচন হবে না। যত গুম খুন করেছেন সবকিছুর বিচার হবে।’
দলটির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা দুই টাকা দিয়ে গণভবন কিনে নিয়েছিলেন। এবারো তা নিজের দখলে রাখতে চান।’
ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বক্তা অনেকেই। তবে বক্তব্য একটাই, শেখ হাসিনাকে সরানো। যার কারণে দেশের স্বাধীনতা ভুলুন্ঠিত।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ থাকলে মহাসমাবেশ হয়। আর মহাসমাবেশ হলে তা হয়ে যায় মহাসমুদ্র। আমরা নিত্যপণ্যসহ ১০ দফা দিয়ে বিভাগীয় সমাবেশ করেছিলাম। কিন্তু স্বৈরাচার তা মানে না। প্রতিনিয়ত কাঁচা মরিচ, খাদ্যদ্রব্যসহ বিদুৎতের মূল্য বেড়েই চলছে। জনগণ ফুঁসে ওঠেছে। এখন পালাবার পথও পাবেন না।’
আরেক যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘এখন আর দিনের ভোট রাতে করতে দেওয়া হবে না। রক্তের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও ভোট রক্ষা করা হবে।’
এর আগে দুপুর ২টায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।