আলিফ হোসেন,তানোরঃ রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী কালিকাপুর ইউনিয়নের (ইউপি) আলোচিত চেয়ারম্যান ও সজল ফিসারিজ এর স্বত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে সৌখিন মৎস্য শিকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন ইউপি চেয়ারম্যানের এমন প্রতারণার খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে, সচেতন মহলও বিশ্ময়ে হতবাক। এদিকে আলোচিত এই প্রতারণার ঘটনা ধামাচাঁপা দিয়ে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে চেয়ারম্যান তার ইউপি কার্যালয়ে কথিত সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে অভিযোগ থেকে নিজেকে আড়ালের চেস্টা করছে।
স্থানীয়রা বলছে, যে ব্যক্তি মাছ শূণ্য পুকুর দেখিয়ে এমন প্রতারণা করতে পারেন, সে ব্যক্তি নৈতিকভাবে চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তারা চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বলেন, এর আগেও টিআর-কাবিখা-কাবিটা,সালিশ বাণিজ্যে, মাতৃত্বকালীন ও প্রতিবন্ধী ভাতা এবং এমপির বিশেষ বরাদ্দ নয়ছয়সহ নানা অভিযোগে বির্তকিত হয়েছে চেয়ারম্যান বাবু।
তিনি এবার প্রায় মাছ শূণ্য দীঘিতে টিকিটের মাধ্যমে মাছ শিকারের ব্যবস্থা করে প্রায় ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পুরো কালিকাপুরের মানুষের মুখে চুনকালি মাখিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, মান্দার কালিকাপুর ইউপির মল্লুকপুর গ্রামে প্রায় ৪৫ বিঘা আয়তনের দীঘি রয়েছে আশরাফুল ইসলাম বাবুর। সম্প্রতি দীঘিতে টিকিট কেটে সৌখিন মৎস্য শিকারীদের জন্য বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের আয়োজন করা হয়। দীঘিতে ৫৮টি চৌকি বসানো হয়। প্রতিটি চৌকির মুল্য ৪০ হাজার টাকা।
সেই হিসেবে প্রায় ২৩ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। অথচ দীঘি থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার মাছও উঠেনি। গত ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর দুইদিন মাছ শিকার আয়োজন করা হয়। টিকিটসহ দুই দিনে একজন মৎস্য শিকারীর প্রায় ৮০ হাজার থেকে লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ও ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার বিভিন্ন এলাকার সৌখিন মৎস্য শিকারীরা মাছ শিকার করতে দিঘিতে হুইল-বড়শী ফেলেন। কিন্ত্ত কেউ বড় মাছ শিকার করতে পারেনি, এমনকি বেলে ও পুঁটি মাছ হুইলে উঠেছে, দু একটা মাছের ওজন সর্বোচ্চ তিন কেজি, ৪০ হাজার টাকার টিকেট কেটে দুদিনে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকার মাছও কেউ পায়নি। অথচ বলা হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের মাছ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সৌখিন মৎস্য শিকারী বলেন, মাছ ধরা বা না ধরা কোনো বিষয় না, কিন্ত্ত মাছের যে ওজন তাতে চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কারণ ১০ কেজি ওজনের একটি মাছও যদি কেউ শিকার করতে পারতেন তাহলেও বুঝতাম দিঘিতে বড় মাছ আছে। এঘটনায় সৌখিন মৎস্য শিকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে কৌশলে পালিয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী বলেন, এই দিঘিতে বড় মাছ নাই, তারা সৌখিন মাছ শিকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কারণ সৌখিন মৎস্য শিকারিরা শখের বসে বড় মাছ শিকার করতে টিকেট কেটেছেন, তবে মাছের সাইজ দেখে বোঝা গেছে এটা প্রতারণা। তারা টিকিটের মুল্য ফেরত ও আয়োজকদের শাস্তির দাবি করেছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কালিকাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বাবু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাছ শিকারী সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্ত্ত একটি মহল অবৈধ সুবিধা না পেয়ে এসব অপপ্রচার করছে।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) গোলাম মাওলা বলেন, আবেদন পেয়ে পুকুরে জাল টেনে সন্তোষজনক মাছ পাওনা যায়নি। দীঘির মালিক ও কয়েকজন মৎস্য শিকারীর জোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে ২৫ হাজার টাকা টিকিটের মুল্য নির্ধারণ করে মাছ শিকারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।