• আজ ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিরাজদিখানে ১৫ বছর ধরে স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার ক্ষমা রানী দে! দেখার কেউ নেই!

| নিউজ রুম এডিটর ৮:০৪ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ২১, ২০২৪ সারাদেশ

 

সিরাজদিখান প্রতিনিধিঃমুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ক্ষমা রানী দে নামে এক গৃহবধূ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্বামী উত্তম দে’র বিরুদ্ধে। বছরের পর বছর ধরে যৌতুকসহ নানা অযুহাতে গৃহবধূ ক্ষমা রানী দে’র উপর স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে মর্মে অভিযোগ ভুক্তভোগী গৃহবধূর। পাষন্ড স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের নির্যাতনের শিকার হয়ে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে আদালতের দারস্থ হয়েও ন্যায় বিচার না পেয়ে গতকাল সোমবার স্থানীয় সাংবাদিকদের দারস্থ হয়েছেন ক্ষমা রানী দে।

স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর গ্রামের দুলাল দে’র ছেলে উত্তম দে’র সাথে হিন্দু রিতি রেওয়াজ অনুযায়ী টংগীবাড়ী উপজেলার আব্দুল্লাহপুর (করমজের বাড়ী) গ্রামের মৃত হরিদাস ভদ্রের মেয়ে ক্ষমা রানী দে’র বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের ওরশে একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে। বিয়ের কয়েক বছর ভরণপোষন দিলেও প্রায় ১৫ বছর যাবৎ ক্ষমা রানী দে’র ভরণপোষণের খরচ না দিয়ে যৌতুকের জন্য নানা ভাবে নির্যাতন চালায় স্বামী উত্তম দে ও তার পরিবারের লোকজন। সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বামীর নির্যাতন সহ্য করে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করে সংসারের খরচ যোগান দেওয়ার পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগান দিয়ে আসছেন গৃহবধূ ক্ষমা রানী দে। একদিকে সংসার আর সন্তানদের পরাশোনার খরচের বোঝা আরেক দিকে মারপিট আর হুমকি ধমকিতে অতিষ্ট হয়ে এক পর্যায়ে ক্ষমা রানী দে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের দারস্থ হয়ে সামাজিক ভাবে স্বামী উত্তম দেসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের নির্যাতনের বিচার চান। কিন্তু তাতে কোন প্রতিকার পাননি তিনি। উল্টো স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানী করে আসছেন উত্তম দে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে বিচার না পেয়ে স্বামী উত্তম দেসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ দায়রা জর্জ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন ক্ষমা রানী দে।

স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করায় নির্যাতনের মাত্রা আরো কয়েকগুন বারিয়ে দেয় স্বামী উত্তম দেসহ তার পরিবার। এমনকি স্বামী উত্তম দে গৃহবধূ ক্ষমা রানী দে’কে তার মাদক ব্যবসা করতে বাধ্য করলে ক্ষমা রানী দে তাতে অস্বীকৃতি জানালে শারীরিক ও মানুসিক নির্যাতনের পাশাপাশি নাইশিং গ্রামের চান মিয়ার ছেলে রতন সৈয়াল ও মালখানগর গ্রামের বাদশার ছেলে রাজিবসহ উত্তম দের অনুসারী বেশ কয়েকজনকে দিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেন গৃহবধূ ক্ষমা রানী দে। স্বামী ও তার লোকজন কর্তৃক দেওয়া হুমতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্ষমা রানী দে একাধিকবার সিরাজদিখান থানায় লিখিত অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরী করলেও সাবেক এমপি মহিউদ্দিনের পুত্র রিয়াদের প্রভাব খাটিয়ে লিখিত অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরী উড়িয়ে দেন স্বামী উত্তম দে। গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, পুলিশ প্রশাসন ও আদালতে নির্যাতনে বিচার চেয়ে না পেয়ে বর্তমানে গৃহবধূ ক্ষমা রানী দে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন।

নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধূ ক্ষমা রানী দে স্থানীয় সাংবাদিকদের দারস্থ হয়ে অভিযোগ করে বলেন, ১৫ বছর ধরে আমাকে সে ভরণপোষণ দেয় না। আমি বাড়িতে বাড়িতে কাপড় বিক্রি করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে আদালতে মামলা করেও আমি কোথাও কোন বিচার পাই নাই । কেউ আমাকে সাহায্য করতে আসলে আমার স্বামী তাদের সংখ্যালঘু নির্যাতনের মামলা দিয়ে হয়রানী করবে তাই কেউ আমাকে সাহায্যও করতে আসে না। আমি অসহায় হয়ে গেছি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি আমার স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন ও আমার স্বামীর পালিত লোকজনের নির্যাতন আর হুমকি ধমকি থেকে রেহাই পেতে চাই।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উত্তম দে’র মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

মালখানগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হযরত আলী মুঠোফোনে বলেন, উত্তম দে মাদক সেবী এবং মাদক ব্যবসা করে। আমি এলাকার মাদক নির্মূল করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ছয়টা মামলার আসামী হয়েছি। উত্তম দে তার বৌকে নির্যাতন করে সেই বিচারে গিয়ে আমরা কয়েকজন মামলা খেয়ে হয়রানীর শিকার হয়েছি৷ সাংবাদিকরা লেখা লেখি করে বিষয়টা প্রশাসনের নজরে আনেন। আমরা তার পাশে আছি।

এ ব্যপারে মুন্সীগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অজয় চক্রবর্তী বলেন, উত্তম দে একজন মাদকাশক্ত। সে তার স্ত্রী ক্ষমা রানী দে’কে নানা ভাবে নির্যাতন করে আসছে৷ তার নির্যাতনের বিচার করতে গেলে সে পুজা উদযাপন পরিষদের নেকাককর্মীদের হুমকি ও একাধিক মেম্বারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি উত্তম দের যথাযথ শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।