• আজ ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হত্যা মামলার আসামির অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী

| নিউজ রুম এডিটর ১০:৫৫ অপরাহ্ণ | ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪ মুন্সীগঞ্জ

 

সিরাজদিখান প্রতিনিধিঃ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে হত্যা মামলার আসামী সোহেল রানা ও তার সন্ত্রাসী বাহীনির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে দিনযাপন করছে উপজেলার পূর্ব রশুনিয়া গ্রামসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষ। স্বেচ্ছাচারিতা, জাল দলিল করে অন্যের জমি দখল, নিরপরাধ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানীসহ নানা অন্যায় অপকর্মের অভিযোগে রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি তার অন্যায় অপকর্মের প্রতিবাদ করায় মামলা ও হামলাসহ নানা ভাবে অত্যাচারের শিকার হয়েছেন ওই এলাকার অসংখ্য মানুষ।

সে পূর্ব রশুনিয়া গ্রামের মৃত খলিল বেপারীর ছেলে। অভিযুক্ত সোহেল রানার স্বেচ্ছাচারীতা,জোর পূর্বক জমি দখল, হয়রারী মূলক মিথ্যা মামলা ও তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলা ও অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে সম্প্রতি সিরাজদিখান থানায় তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ১০৬ জনের গণস্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে বলা হয়,পূর্ব রশুনিয়া গ্রামের মৃত সমনের ছেলে নুরুজ্জামান গংদের মালিকানা কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ৬৭ শতাংশের একটি জমি জাল দলিল করে নামজারী করে সোহেল রানা। জাল দলিল করে নামজারি করা জমি কবজা করতে না পেরে জমিতে রোপনকৃত ফসল ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে নিধন করে প্রায় ১ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে। জমি দখলকে কেন্দ্র করে সোহেল রানা সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে নুরুজ্জামান ও চাচাত ভাই আসলামসহ তার ছেলে আরিফের উপর কয়েক দফায় হামলা চালিয়ে তাদের গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম করে।

 

এ নিয়ে ভুক্তভোগী নুরুজ্জামান তার পক্ষের লোকজন কর্তৃক অভিযুক্ত সোহেল রানার বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করে। সোহেল রানা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় গুরুত্ব আহত হয়ে ২০১৭ সালে নুরুজ্জামানের চাচাত ভাই আছলাম শেখ মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে সিরাজদিখান থানায় একটি হত্যা মাললা দায়ের করা হয়। যার নং-৭। শুধু তাই নয় সোহেল রানা ও তার সন্ত্রাসী বাহীনির হাতে নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে তাদের বিরুদ্ধে সিরাজদিখান থানা ও আদালতে একাধিক মামলা দায়েরসহ ২০টির অধিক লিখিত অভিযোগ ও সাধারণ ডাইরী করেন ভুক্তভোগীরা।

অভিযুক্ত সোহেল রানার নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে মামলা ও লিখিত অভিযোগ করে প্রতিকার পান নি কেউই। উল্টো সোহের রানার কৌশলী পেশার কৌশলে সাজানো গায়েবি মামলায় আসামী হয়ে হয়রানীর শিকার হয়ে আসছেন অনেকে। এমনি সেইসব গায়েবী মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছেন অনেকে। বাদ যায় নি সোহেল রানার খোদ আপন ভাইয়ের স্ত্রীও। যৌতুকের জন্য দেবর সোহেল রানার হাতে মারধর শিকার হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেও নিস্তার পাননি ভুক্তভোগী ভাবী রোকেয়া বেগম।

কয়েক মাস পূর্বে পূর্ব রশুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুজ্জামান শেখের সাব কবলা দলিল মূলে কেনা ৬৭ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখলকে কেন্দ্র করে তার বাড়ীঘরে হামলা চালিয়ে পরিবারের লোকজনকে মারধর করে সোহেল রানা ও তার সন্ত্রাসী বাহীনির লোকজন। এ ঘটনায় নুরুজ্জামান শেখ বাদী হয়ে সিরাজদিখান থানায় মামলা দায়ের করেন। যাহার নং- ৫। পরবর্তীতে অভিযুক্ত সোহেল রানা বাদী হয়ে নুর জামালের বাড়ীঘরে হামলার দায় এড়াতে নুরুজ্জামান সহ তার লোকজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি কাউন্টার মামলা দায়ের করে। যার নং- ৬। সোহেল রানার দায়ের করা মামলায় চোরমর্দ্দন গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম ও তার ছেলে সাজিদকে আসামী করা হয়। অথচ মামলার ঘটনার তারিখ ও সময় তিনি ও তার ছেলে ঘটনাস্থলের আশপাশেই ছিলেন না। তিনি ও তার ছেলে অন্তঃস্বত্ত্বা পুত্রবধূর চিকিৎসা প্রদানের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ভুক্তভোগী আবুল কালামের উপস্থাপন করা সিসিটিভি ফুটেজে মামলার ঘটনার সাথে তাদের পিতা পুত্রের সংশ্লিষ্টতা না থাকার প্রমান মেলে।

স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ করে বলেন, এডভোকেট সোহেল রানার অত্যাচার আর দখলদারিত্বে আমরা এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছি। সে সাবেক এমপি মহিউদ্দিনের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় এমন কোন অপকর্ম নেই সে করে নাই। এলাকার একাধিক ব্যক্তির সম্পত্তি জোর করে দখল করে ভোগ করছে সে। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে তাকেই সে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছে। আমরা সোহেল রানার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে চাই।

ভুক্তভোগী নুরুজ্জামান শেখ বলেন, আমি সাব কবলা দলিল মূলে ৬৭ শতাং একটি জমি কিনি। সোহেল রানা জাল দলিল করে আমার সেই জমি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে। এ নিয়ে সে আমার বাড়ীঘরে হামলা চালিয়ে আমার পরিবারের লোকজনকে মারধর করে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছে। আমরাসহ এলাকাবাসী হোসেল রানার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে এলাকার ১ শ জন গণস্বাক্ষর করে তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।

হত্যাকান্ডের শিকার নিহত আসলামের ছেলে মোঃ রাকিব শেখ অভিযোগ করে বলেন, আমাদের সম্পত্তি সোহেল রানা জোর পূর্বক দখল করে অন্যায় ভাবে ভোগ করতেছে। ২০১৭ সালে সে আমার বাবাকে মারধর করে। তার মারধরের কারণে আমার বাবা মারা যায়। আমার চাচা বাদী হয়ে সোহেল রানার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। কিন্তু এতো বছর পার হয়ে গেলেও আমি আমার বাবার হত্যার বিচার পাচ্ছি না। আমি আমার বাবার হত্যাকারী সোহেল রানার বিচার চাই।

এ ব্যপারে রশুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আবু সাইদ বলেন, পূর্ব থেকেই দেখে আসছি নুরুজ্জামান ওই জমি ভোগদখল করে আসছে। সোহেল রানা জমিটির মালিকানা দাবী করলে উভয় পক্ষকে আপোষ মিমাংসার জন্য বলা হয় কিন্তু সোহেল রানা মিমাংসার জন্য বসে নাই। এ নিয়ে তাদের উভয় পক্ষ মামলা করে । প্রকৃতপক্ষে কাগজপত্র অনুযায়ী জমির মূল মালিক নুরুজ্জামানরাই।

এ ব্যপারে অভিযুক্ত সোহেল রানার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

এ বিষয়ে সিরাজদিখান থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমান জানান,অভিযোগটি পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।