

রাকিবুল আওয়াল পাপুল, শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
নিখোঁজের ২০ ঘণ্টা পর শেরপুরের শ্রীবরদীর বটতলার একটি মৎস্য খামারের পুকুর থেকে দুই শিশুর ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার সকালে শ্রীবরদী উপজেলার তাতিহাটি ইউনিয়নের বটতলা মৃদাবাড়ি এলাকা থেকে ওই দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মৃত শিশুরা হলো- স্থানীয় রাজমিস্ত্রী মো. সেলিম মিয়ার মেয়ে সকাল আক্তার (৭) এবং অটোরিকশা চালক স্বপন মিয়ার মেয়ে স্বপ্না খাতুন (৬)। তারা দুইজনই স্থানীয় একটি নুরানী মাদরাসার শিক্ষার্থী।
মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার জাহিদ।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পর থেকে শিশুদের খুঁজে পাচ্ছিলেন না পরিবারের সদস্যরা। পরে স্থানীয়ভাবে অনেক খুঁজেও তাদের সন্ধান না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ছবি দিয়ে পোস্ট করে সন্ধান চাওয়া হয়। এছাড়াও এলাকায় সারারাত মাইকিং করা হয়। এদিকে আজ সকাল ৭টায় বটতলা মৃদাবাড়ি এলাকার একটি মৎস খামারে তাদের মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। পরে শ্রীবরদী থানা-পুলিশে খবর দিলে পুলিশ শিশু দুটির মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় শিশুদের পরনের পোশাক ছিল না।
জানা গেছে, স্থানীয় শাখাওয়াত হোসেনের জমিতে তৈরিকৃত পুকুরটি লিজ নিয়ে মৎস চাষ করছেন মোস্তফা মিয়া নামের এক ব্যক্তি। স্থানীয়রা এটাকে রহস্যজনক বলে দাবি করছেন, কারণ শিশু দুটির বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে। এই পুকুরে মাসখানেক আগেও রহস্যজনকভাবে একজন মারা যায়। অভিযোগ উঠেছে, পরে প্রজেক্টের মালিক সেটা ধামাচাপা দেয়। স্থানীয়দের দাবি, যে পুকুর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি কয়েকটি পুকুরের ভেতরে। এ ছাড়াও তাদের গায়ের পোশাক এখানও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে শিশু দুটির পরিবার এখনও কোনো অভিযোগ করেন।
নিহত শিশু সকাল আক্তারের মামা মো. সাগর মিয়া বলেন, ‘সকালের আম্মা ওই এলাকায় ব্র্যাক সেন্টারে হস্তশিল্পের কাজ করে। সেই কারণে সে তার মায়ের কাছে যেতে পারে। সেই সময় গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে যেতে পারে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি খবর পাওয়ার সাথে সাথে থানায় খবর দেই এবং নিজেও ঘটনাস্থলে আসি। আমার কাছে বিষয়টা পানিতে ডুবে মরার মতোই মনে হচ্ছে।’
শিশু স্বপ্নার বাবা স্বপন মিয়া বলেন, ‘আমি গতকাল ঢাকায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় থেকে মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে ঢাকা যাইনি। এরপর থেকে খোঁজাখুঁজি করতেছি। মাইকিং করতেছি। কোনো খোঁজ খবর পাইতেছিলাম না। আজকে সকাল বেলা মেয়ের লাশ পেলাম। কীভাবে কি হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না!’
এ বিষয়ে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, ‘খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বাচ্চা দুটির গায়ের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে না। মরদেহ এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা ঘটনাটিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করছি। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা চলমান আছে।’