স্টাফ রিপোর্টার: মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নেই মাদক তথা ইয়াবা ট্যাবলেটের জমজমাট ব্যবসা চলছে। থানা পুলিশের যথাযথ তদারকি এবং পর্যাপ্ত পরিমান সোর্স নিয়োগের অভাবে মাদকের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অর্ডার বাই সাপ্লাই বিষয়টি পুরোনো হলেও অনেক ব্যবসায়ী বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে বাড়ীতে কিংবা ক্রেতাদের বলা জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে মাদক।
এতে করে যুব সমাজের শিংভাগ ইয়াবা ট্যাবলেটের সাথে পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে পরছে। এমনকি মাদক সেবীদের সংখ্যাও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সূত্র এবং নিয়োজিত সোর্সের দেয়া তথ্য অনুযায়ী উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন জুড়ে মাদকের বিস্তৃতি থাকলেও মালখানগর ও ইছাপুরা ও রশুনিয়া ইউনিয়ন মাদকের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। এ তিনটি ইউনিয়ন থেকে উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে মাদক তথা ইয়াবা ট্যাবলেটের সরবরাহ হয়ে থাকে। এ তিনটি ইউনিয়নে অন্ততপক্ষে ৪০-৫০ জন মাদক ব্যবসায়ী নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে। উপজেলার পার্শ্ববর্তী টংগীবাড়ী উপজেলা থেকে সিরাজদিখান উপজেলায় মাদকের প্রায় ৮০ শতাংশ সরবরাহ হয়ে থাকে বলে বিশেষ একটি সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে মাদক সরবরাহের সাথে সম্পৃক্তত থাকার তথ্য উঠে এসেছে। বিগত কয়েকমাসে ইয়াবা ট্যাবলেট বড় চালানসহ বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু তারপরও মাদকের বিস্তৃিতি দিন বেড়েই চলেছে।
মাদক ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ঘুরে ঘুরে ইয়াবা ট্যবলেট বিক্রি করছে। যা ভবিষ্যতে প্রজন্মের জন্য অত্যান্ত ভয়ংকর রূপ নিবে বলে মনে করেছেন অনেকে। উপজেলা জুড়ে মাদকের ভয়াবহ বিস্তারকে পুলিশের অপতৎপরতাকেই দুষছেন সুশীল সমাজের সচেতন মহলের লোকজন। অন্যদিকে থানা পুলিশের মাদক বিরোধী কার্যক্রম বা ধরপাকড় আগের তুলনায় কমে গেছে। সুশিল সমাজের সচেতন মহলের নাগরিক সমাজে মাদক তথা ইয়াবা ট্যাবলেটের ভয়াবহ বিস্তৃতি সমাজ বিদ্ধংশী বোমা হিসেবে আখ্যা দিয়ে সমাজের দায়িত্বশীল মানুষদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন। মাদক তথা ইয়াবা ট্যাবলেটে আক্রান্ত সমাজ সাড়বে কোন ট্যাবলেটে? এমনটাই প্রশ্ন তাদের।
উপজেলার বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে আলাপ করলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে রাজনৈতিক লোকজন মাদক সরবরাহে জড়িত আছে বলেই মাদকের বিস্তার সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নকে মাদক মুক্ত ইউনিয়ন হিসেবে দেখতে চেয়ে তারা আরো বলেন, মাদক সম্পূর্ণ রূপে নির্মূল করতে হলে প্রথমে সেইসব অসাধু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ অসাধূ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে আসছে। প্রশ্নের জবাবে তারা আরো বলেন, এমনকি তাদের সাথের লোক, দলীয় লোক এবং তাদের ভাইও যদি মাদকের সাথে জড়িত থাকে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সব সময় সহযোগী করবেন।
এ ব্যপারে সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল) জানান, রাশেদুল ইসলাম, সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনারা তাদের বিরুদ্ধে তথ্য দিলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। আমাদের বিট পুলিশিং কার্যক্রম করোনার কারণে সীমিত আকারে চালু আছে। আমরা যেসব মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে আইনের সোপর্দ করি তারা অল্প সময়ের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় ব্যবসা শুরু করে এবং তাদের দীর্ঘ সময় আইনের মাধ্যমে আটকে রাখা সম্ভব হয় না। আমরা গতমাসেও বেশ কিছু মাদকসহ আসামী ধরেছি। ধরলে কি হবে, আমরা একদিকে ধরি তারা ১০-১৫ দিন পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও ব্যবসা শুরু করে। মাদক থেকে সরে এসে অন্য কোন পেশায় জড়িত হওয়ার বিকল্প ব্যবস্থায় সরকার যদি উদ্যোগী হন তাহলে আমার মতে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হতো।