• আজ ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তরখানে মামলার বাদিকে প্রাননাশের হুমকী

| নিউজ রুম এডিটর ৭:৪০ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২ ঢাকা, সারাদেশ

মোঃরফিকুল ইসলাম মিঠু।। রাজধানীর উত্তরখানের আটিপাড়া বাবুইপাড়া এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মাজেদা বেগম (৩৪) ও তার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে নূর জাহান আক্তার আলোকে বেধড়ক মারধরের পর এবার ঘরবাড়ি ও জমিজমা ছাড়তে তাদেরকে হত্যার হুমকী দিয়েছে স্হানীয় প্রভাবশালী, সন্ত্রাসীরা, ভূমিদস্যূ এবং মামলার আসামীরা। জমির মালিক মাজেদা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা সন্ত্রাসীদের ভয়ে এখন অনেকটাই পালিয়ে বেড়াচেছ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল শনিবার রাতে এবং ভালবাসা দিবসের দিন সকালে দু’ দফা ভুক্তভোগী মাজেদা বেগমের বসতবাড়িতে গিয়ে তাদেরকে পিটিয়ে আহত করে প্রাননাশের হুমকী প্রদান করে মামলার আসামী এবং একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী।

এঘটনায় ভুক্তভোগী মাজেদা বেগম বাদি হয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি উত্তরখান থানায় সাত জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৬। ধারা ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৭৯/৪২৭/৫০৬ পেনাল কোড।
মামলার আসামীরা হলো- মো,আরজু মিয়া (৫০), মো, শাহিন( ৫০),মো, শহিদুল (৫০), মো, রুহুল আমিন (৩৬), লাল চান (৫০) ও মো, আক্তার হোসেন।

মামলা সূএে জানা যায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০ টার দিকে উত্তরখান থানার আটিপাড়া বাবুইপাড়া এলাকার ২৯ নং বাসায় মাজেদা বেগমের বাড়িতে উক্ত মামলা আসামীদের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন বহিরাগত লোক আমার বসতবাড়িতে অনাধিকারে প্রবেশ করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচিছন্ন করতে যায়। এসময় মাজেদা বেগম (৩৪) ও তার ৮ম শ্রনি পড়ুয়া মেয়ে নূর জাহান আক্তার আলো (১৩) বাধা প্রদান করলে তাদেরকে মো, আরজু মিয়ার নেতৃত্বে তার সহযোগীরা কিল- ঘুষি, টানা হেচড়াসহ তলপেট লাথি মেরে গুরুতর আহত এবং ফুলা জখম করে। এক পর্যায়ে তারা এই দুই নারীকে শ্লীলতাহানী করে। যাবার বেলায় সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক ভাবে মাজেদার বাড়ির বিদ্যুৎতের লাইন কেটে ফেলে এবং দরজাসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল ভাংচুর- তছনছ করে ক্ষতিসাধন করে। পরবর্তীতে মাজেদা বেগম ও তার মেয়ে নূর জাহান আক্তার আলোর ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্তাসীরা দলবল নিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। পরে আহত মা ও মেয়েকে স্হানীয় লোকজন উদ্বার করে টঙ্গিস্হ শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়েছে।

জানা গেছে,উত্তরখানের আটিপাড়া বাবুইপাড়া এলাকার মৃত নূর মোহাম্মদ এর মেয়ে মাজেদা বেগম। তিন ভাই তিন বোনের মধ্য মাজেদা সবার ছোট। ইতিপূর্বে মাজেদার এক ভাই মারা গেছে। এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী সে। তার স্বামির নাম নূর আলম। পিতা মারা যাবার পর তারা পৈএিক ওয়ারিশ সূএে জমির মালিক হয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে ৬ ভাইবোন মিলে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছিল। ওয়ারিশ সূএে তারা মোট ৪৬.৮০ পয়েন্ট জমির মালিক বলে জানা গেছে। তার মধ্যে বর্তমানে মাজেদা বেগম দখলে আছে মাএ ৭ শতাংশ। আর বাকী জমিগুলো তার বেদখলে রয়েছে।
এবিষয়ে ঢাকার বিজ্ঞ আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং- ১২০/২০২১, ধারা-১৪৫। চলমান মামলাটি গড ১৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে খারিজ হয়ে গেলে পরবর্তীতে বাদি বিজ্ঞ জজ আদালতে গত ২৫ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে পূনরায় মামলাটি আপিল করেন। যার আপিল নং- ১৫৩/২০২২। এই মামলাটি এখনও আদালতে বিচারাধীন আছে। এছাড়া বাদি মাজেদা বেগম ঢাকার প্রথম যুগ্ন জজ আদালতে গত ২০ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৪৩/২০২২। এটিও বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

ভুক্তভোগী মাজেদা বেগম ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অভিযোগ করে জানান, মৃত নূর মোহাম্মদের এর সকল ওয়ারিশ সন্তানদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে এলাকা ছাড়া এবং প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে আসছে প্রভাবশালী ও মামলার আসামীরা। এছাড়া স্হানীয় ডেসকো অফিস থেকে পূনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আসলে বারবার তাদেরকে হূমকি দিয়ে বাধাগ্রস্ত করে, পরবর্তীতে ডেসকো কর্তৃপক্ষ উত্তরখান থানায় পুলিশের সহায়তা মাজেদা বেগম এর বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে চেয়ে একটি নোটিশ প্রেরণ করেন এবং মাজেদা বেগম ও তার ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে ঢুকতে গেলে কতিপয় সন্ত্রাসীরা এবং তাদের নিজস্ব লাঠিয়াল পোষা মহিলা দ্বারা বাধা প্রদান করা হচেছ। পাশাপাশি বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বাড়িতে ঢুকতে গেলে দা- বটি, কুড়াল ও দেশীয় ধারালো অন্ত্র দিয়ে মাজেদা বেগম গংদেরকে জখম করার চেষ্টা করছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী মাজেদা বেগম জানান, স্হানীয় ভূমিদস্যূ, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, জমির দালাল ও
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে থানায় ও ঢাকার আদালতে একাধিক মামলা করে আমি এখন দিশেহারা। প্রতিনিয়তই আমাকে মামলার আসামি ও বহিরাগত সন্তাসীরা প্রাননাশের হুমকী-ধামকীসহ খুন করে জীবনে শেষ করে দিবে বলে হুমকী প্রদর্শন করছে। এছাড়া তারা আমার বসত ঘরবাড়ি ও জমিজমা জোর করে নেয়ার জন্য এক ধরনের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বিবাদি মো,আরজু মিয়া ও মো, শাহিন গংদের সাথে একাধিকবার যোগায়োগের চেষ্টা করে তাদের মোবাইল ফোন নাম্বারটা বন্ধ পাওয়া গেছে। সে কারনে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া অভিযুক্ত শহিদুল, রুহুল আমিন, লাল চান ও মো, আক্তার হোসেনকে ঘটনাস্হলে গিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। সে কারনে তাদের বক্তব্য নেয়া যায়নি।

ডিএমপির উত্তরখান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মজিদ জানান, এ সংক্রান্তে থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। ভুক্তভোগী বাড়ির মালিক মাজেদা বেগম বাদি হয়ে ছয় জনকে আসামী করে মামলা করেছেন। ওই মামলার আসামীরা এখন জামিনে আছে।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারটি জীবনে বেচে থাকার তাগিদে এবং নিরাপত্তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,আইজিপি, এলিট ফোর্স র্্যাব ডিজি, ডিএমপির পুলিশ কমিশন, উত্তরা বিভাগের ডিসিসহ সরকারের সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্হা এবং সংশ্লিষ্ট মহলের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী ও মামলার বাদি মাজেদা বেগম।